আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালে জাপানে জন্মসংখ্যা ৬ লক্ষ ৭০ হাজারের নীচে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৮৯৯ সালে জাতীয় রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে এটি সর্বনিম্ন সংখ্যা এবং সরকারি পূর্বাভাসের চেয়েও খারাপ। জনসংখ্যার এই দ্রুত হ্রাস একটি উদ্বেগজনক প্রশ্ন তুলে ধরেছে, এত কম সংখ্যক তরুণ জনসংখ্যা নিয়ে জাপান কি তার অর্থনীতি ও সমাজকে টিকিয়ে রাখতে পারবে?
২০১১ সাল থেকে জাপানের জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই জাপানে মৃত্যুর সংখ্যা জন্মের চেয়ে প্রায় দশ লাখ বেশি ছিল। রেকর্ড শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবার নতুন জন্মের সংখ্যা ৭ লক্ষের নীচে নেমে এসেছে। আগের বছরের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ কম। এটি এশিয়ার এই অর্থনৈতিক শক্তির জন্য বার্ষিক জনসংখ্যার সবচেয়ে তীব্র হ্রাস। দেশটির জনসংখ্যা একসময় ১২৮ মিলিয়ন ছিল। তা এখন প্রায় ১২৩ মিলিয়ন এবং ক্রমশ কমছে।
জাপানে প্রতি মহিলায় সন্তান জন্মদানের হার প্রায় ১.১৪। যা জনসংখ্যা স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় হার ২.১-এর চেয়ে অনেক কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই নারীদের কম সন্তান নেওয়ার প্রধান কারণ। কম মজুরি, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং শিশুর যত্নে বিপুল খরচ তরুণ-তরুণীদের বিয়ে করতে বা পরিবার শুরু করতে নিরুৎসাহিত করছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিয়ের হার তীব্রভাবে কমে গিয়েছে। বিয়ের বাইরে সন্তান জন্মদান সামাজিকভাবে এখনও অপ্রচলিত। কম বিয়ে সরাসরি কম জন্মহারের দিকে পরিচালিত করে।
জাপানের দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং কাজ ও জীবনের মধ্যে সীমিত ভারসাম্যের অভাব সন্তান প্রতিপালনকে কঠিন করে তুলছে। লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে শিশু যত্নের দায় মহিলাদের উপর বর্তায়। এখন বেশি সংখ্যক মহিলা শিক্ষা, কর্মজীবন এবং স্বাধীনতার পথ বেছে নিচ্ছেন। এর ফলে পারিবার শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বা কেউ শুরু করতে চাইছেনই না।
প্রতি বছর কর্মশক্তিতে কম সংখ্যক তরুণ যুক্ত হওয়ায় উৎপাদন, নির্মাণ, কৃষি, যত্নসেবা এবং পরিষেবা খাতের মতো ক্ষেত্রগুলিতে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সরবরাহ শৃঙ্খল চাপের মুখে পড়ছে। ব্যবসার খরচ বাড়ছে।
২০২৫ সাল পর্যন্ত, ৬৫ বছরের বেশি বয়সি জাপানিরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯ শতাংশ ছিল। কর্মশক্তিতে কম সংখ্যক মানুষ সরকারের ক্রমবর্ধমান পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং বয়স্কদের যত্নের খরচ বহন করছে। তরুণ পরিবারের সংখ্যা কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ব্যয় কম। এই কারণে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জাপানে বিদেশী কর্মীর সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তীব্র শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে এমন শিল্পগুলিতে দক্ষ এবং আধা-দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা কর্মসূচি প্রসারিত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার সম্প্রতি একটি নতুন ‘দক্ষতা বিকাশের জন্য কর্মসংস্থান’ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য কর্মসূচির অধীনে ২০২৮ অর্থবছর নাগাদ ১.২৩ মিলিয়ন পর্যন্ত বিদেশী কর্মী গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে।
অভিবাসনকে একটি শ্রম সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, বৃহৎ পরিসরে স্থায়ী বসবাসের পথ হিসেবে নয়, যার অর্থ হলো, বিদেশীরা কাজ করতে পারবে কিন্তু পরিবার শুরু করতে পারবে না।
ভবিষ্যতের অর্থনীতি চালানোর জন্য পর্যাপ্ত মানুষ না থাকলে কি জাপানের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে?
সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক পতনের সম্ভাবনা কম, কিন্তু জাপান বাস্তব ঝুঁকির সম্মুখীন। দেশটি একটি প্রযুক্তিগত শক্তিধর দেশ, যা অটোমেশন এবং রোবোটিক্সে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যা শ্রমিকের ঘাটতি আংশিকভাবে পূরণ করতে পারে। কিন্তু যন্ত্র পুরোপুরি মানুষের বিকল্প হতে পারে না, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং পরিষেবা শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলিতে।
