আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাগ্য কখন কাউকে কোথায় নিয়ে যাবে আমরা কেউই জানি না। যেমনটা জানতেন না নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সুশিলা কারকি। পদত্যাগি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি খোদ তাঁকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছিলেন। তিনি ২০১৬ সালের ১১ জুলাই নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হন। এখন ওলির ছেড়ে যাওয়া পদে সম্ভবত দেখা যেতে পারে সুশীলাকে।

নেপালের বিচার বিভাগের একজন নির্ভীক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত সুশীলা প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর এক বছর দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মেয়াদকালে তিনি দেশের কিছু মন্ত্রী এবং শক্তিশালী আমলাদের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেছেন।

তবে সুশীলার জীবনের একটি আকর্ষণীয় দিক হল তাঁর স্বামী দুর্গাপ্রসাদ সুবেদির অতীত। দূর্গাপ্রসাদই নেপালের প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই বিমানটিতে বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী মালা সিনহাও ছিলেন। সুবেদি নেপালি কংগ্রেসের একজন যুব নেতা ছিলেন।

আরও পড়ুন: মাত্র ১৭০০ টাকায় ‘শুভরাত্রি’! নিজের অদ্ভুত গুণ দিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছেন মহিলা

নেপালের প্রথম ছিনতাইয়ের ঘটনায় সুশীলার স্বামী জড়িত

১৯৭৩ সালে রাজা মহেন্দ্রের শাসনকালে সুবেদি নেপালের প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ১০ জুন বিরাটনগর থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার পথে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করা হয়। বিমানে থাকা ১৯ জন যাত্রীর মধ্যে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী মালা সিনহা। তবে, ছিনতাইয়ের মূল কারণ ছিল বিরাটনগরের ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ লক্ষ টাকা বিমানটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার মস্তিষ্কপ্রসূত এই ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য টাকা সংগ্রহ করা। সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সুবেদি ছিলেন কৈরালার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। বিমানটিকে বিহারের ফোর্বসগঞ্জে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয় এবং পরে গাড়িতে করে টাকা দার্জিলিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সুবেদি এবং ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের পরে মুম্বইয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

দুর্নীতি-বিরোধী সুশীলা

বারাণসীর বিএইচইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রী সুশীলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং বিচারবিভাগীয় সংস্কারের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে জেন-জির সহিংস বিক্ষোভের পর নেপাল একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন সুশীলা যদি অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তাঁকে আবারও নির্ভীকতা প্রদর্শন করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সুশীলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রায় ছিল তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী জয়প্রকাশ গুপ্তকে পদে থাকাকালীন কারাদণ্ড দেওয়া। নেপালের ইতিহাসে যা প্রথম। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে তিনি দুর্নীতি দমন ব্যুরোর প্রধান লোকমান সিং কার্কিকে অপসারণ করেন। যার ফলে লোকমান কানাডায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন।

ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি

প্রধান বিচারপতি হিসেবে মেয়াদে তাঁকে কম বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। তাঁর সাহসী পদক্ষেপ রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। নির্বাহী বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে নেপালি সংসদ একবার তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্চের প্রস্তাব আনলে তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট সুশীলাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে পুনর্বহাল করে। এর ফলে সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক নিয়ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। 

বিরাটনগরে জন্মগ্রহণকারী সুশীলার পরিবার নেপালি কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা বিপি কৈরালার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাঁর বাবা চাইতেন সুশীলা ডাক্তার হবেন, কিন্তু তিনি আইন বেছে নেন। তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন, সেখানেই তাঁর দূর্গাপ্রসাদের সঙ্গে পরিচয়। সুবেদি কৈরালার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। সুশীলা কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।