আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীনে এক বাবার ভালোবাসা ও ত্যাগের গল্প সারা দেশের মানুষকে আবেগাপ্লুত করেছে। নিজের মেয়ের মুখে “বাড়ির স্বাদ” ফেরাতে তিনি চাকরি ছেড়ে ৯০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ছোট্ট এক খাবারের দোকান খুলেছেন। ঘটনাটি চীনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের জিলিন প্রদেশের সিপিং শহরের। লি বিংদি নামের এক তরুণী সেখানে জিলিন নরমাল ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। গত এক বছর ধরে লি অভিযোগ করছিলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের খাবার নোংরা এবং তাতে “বাড়ির স্বাদ” নেই।

মেয়ের এই অভিযোগ শুনে তাঁর বাবা, যিনি তিয়ানজিন শহরের একটি বারবিকিউ রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন, নিজের চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি দক্ষিণ চীনে গিয়ে বিশেষভাবে ভাজা ভাত ও নুডলস রান্না শেখেন, যাতে মেয়েকে তার পছন্দের খাবার খাওয়াতে পারেন। সবকিছু শেখার পর তিনি সিপিং শহরে গিয়ে মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের কাছে একটি খাবারের স্টল ভাড়া নেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি সেই স্টল চালু করেন তিনি।

প্রথম দিনে তাঁর বিক্রি হয় মাত্র সাত প্লেট ভাত—তাতে সামান্য লাভ হলেও মেয়ের উপার্জনের তুলনায় অনেক কম। সেদিন লি বিংদি এক ছাত্রকে টিউশন পড়িয়ে ৭০ ইউয়ান (প্রায় ১০ মার্কিন ডলার) আয় করেন, যা বাবার দৈনিক আয়ের চেয়েও বেশি। বাবার কষ্ট দেখে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁর গল্প শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, তাঁর বাবা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রান্না করেন এবং ক্রেতাদের মতামত নিয়ে খাবারের মান আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন।

পরদিনই পরিস্থিতি বদলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং আশপাশের বাসিন্দারা বাবার স্টলের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন। কেউ কেউ ইচ্ছে করেই বেশি অর্ডার দিয়ে সাহায্য করেন, যাতে তাঁর ব্যবসা এগিয়ে যায়। ক্রমে স্টলটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মেয়েও ফাঁকা সময়ে বাবাকে সাহায্য করতে শুরু করেন। লি বিংদি বলেন, “গত মাসে বাবা বলছিলেন ঠান্ডায় দোকান চালাতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এখন তাঁর কাজের ভিড় বেড়েছে—তাঁর মনও উষ্ণ হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “বাবা বড় লাভ করতে চান না। শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহের মতো আয় হলেই তিনি খুশি। মূলত আমার পাশে থাকতে ও আমাকে দেখতে পারলেই তাঁর আনন্দ।” লি বিংদি ও তাঁর বাবা একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছেন। কয়েক বছর আগে মেয়ের মায়ের মৃত্যু হয়েছিল লিউকেমিয়ায়। সেই থেকে বাবা একাই মেয়েকে মানুষ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়ার সময় লি বিংদি যখন দ্বিধায় ছিলেন, তখন তাঁর বাবা বলেছিলেন, “তুমি যেখানেই যাও, আমি তোমার সঙ্গে যাব।” আজ তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখছেন।

লি বিংদি আবেগভরে বলেন, “অনেকে বলে, বাবার ভালোবাসা পাহাড়ের মতো দৃঢ়। কিন্তু আমার কাছে বাবার ভালোবাসা সূর্যের মতো উষ্ণ।”
চীনের সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। অনেকে মন্তব্য করেছেন, “তিনি শুধু ভাজা ভাত নয়, বাবার খাঁটি ভালোবাসাও পরিবেশন করেন।” আরেকজন লিখেছেন, “তাঁর খাবার নিশ্চয়ই সবচেয়ে পরিষ্কার, কারণ তাঁর মেয়ে নিজেই তা খায়।” মেয়ের সুখের জন্য এক বাবার এই ত্যাগ প্রমাণ করে, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, পিতৃস্নেহের ভাষা এক—নিঃস্বার্থ ও অনন্ত।