আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহরের নাড়ি-নক্ষত্র পাইক প্লেস মার্কেটের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত দেয়াল—যার গায়ে ঝুলে আছে হাজারো রঙিন চুইংগাম। শিল্পের প্রচলিত সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে এই ‘চুইংগাম ওয়াল’ আজ হয়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী পর্যটন আকর্ষণ—নান্দনিকতার এক নতুন ব্যাখ্যা।
গাম ওয়ালের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে, যখন মার্কেট থিয়েটারের দর্শকরা শো শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেয়ালে চুইংগাম আটকে দিতে শুরু করেন। প্রথমদিকে মার্কেট কর্তৃপক্ষ এসব গাম পরিষ্কার করার চেষ্টা করলেও, ক্রমাগত দর্শনার্থীদের অংশগ্রহণে সে চেষ্টা ধীরে ধীরে হাল ছেড়ে দেয়। ফলাফল—এক অভিনব ‘গামশিল্প’!
প্রায় ১৫ মিটার দীর্ঘ এই দেয়াল এখন হাজার হাজার চুইংগামের জমে ওঠা স্তরে রূপ নিয়েছে এক বিচিত্র চিত্রপটে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদসহ নানা রঙের চুইংগামে ছেয়ে যাওয়া এই দেয়াল যেন রঙের উৎসব। কেউ গামে নিজের নাম লেখে, কেউ প্রেমের বার্তা রেখে যায়, আবার কেউ বা আঁকে চিত্রকলা—এই দেয়াল আজ এক ‘পাবলিক আর্ট গ্যালারি’।২০১৫ সালে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে পুরো দেয়ালটি একবার খালি করে ফেলা হয়েছিল—সরানো হয় প্রায় এক মিলিয়ন চুইংগাম। তবে কয়েক মাস পার হতে না হতেই মানুষ আবারও গাম লাগাতে শুরু করে—ফিরে আসে পুরনো রঙ ও জীবন্ত উন্মাদনা।
আজ এই দেয়াল শুধুমাত্র ছবি তোলার স্পট নয়, বরং সিয়াটলের নগর-সংস্কৃতির প্রতীক। এখানকার প্রতিটি চুইংগাম যেন কোনও না কোনও আগন্তুকের স্পর্শে লেখা এক নিঃশব্দ স্মৃতিচিহ্ন। নগরের ব্যস্ততার মাঝখানে এই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে এক অদ্ভুত মানসিক অবকাশ—যেখানে দর্শনার্থীরা শুধু চুইংগাম লাগায় না, বরং রেখে যায় তাদের নিজস্ব চিহ্ন। ‘গাম ওয়াল’ প্রমাণ করে, মানুষের ছোট্ট অভ্যাসও সময়ের প্রবাহে রূপ নিতে পারে শহরের চিহ্নে। এটি আজ কেবল একটি দেয়াল নয়, বরং এক বিস্ময়কর সামাজিক শিল্পের জীবন্ত নিদর্শন—যেখানে নোংরাও হয়ে ওঠে নান্দনিক।
