আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলির কার্যালয়ে হামলার ঘটনার নিন্দা হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। এর কয়েক দিন পরেই আরও একটি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের প্রতিবেশী দেশের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেশ কয়েকজন যুবক ঢাকার গ্লোবাল টিভি বাংলাদেশের কার্যালয়ে গিয়ে সংস্থার হেড অফ নিউজ নাজনিন মুন্নিকে অপসারণের দাবি জানান। তাঁরা হুমকি দেন, তাঁদের দাবি না মানলে প্রতিষ্ঠানটির পরিণতি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতোই হবে। ওই যুবকরা দাবি করেন যে, জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা নাজনিন একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২১ ডিসেম্বর। প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তিন দিন পর। ওই সময় ভারতবিরোধী যুবনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়। অভিযুক্ত যুবকরা দাবি করেছিলেন, ২০২৪ সালের বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য। তবে, সংগঠনটি এই ঘটনা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেসবুকে একটি পোস্টে সাংবাদিক নাজনিন লিখেছেন, ৭-৮ জন লোক তেজগাঁওয়ে গ্লোবাল টিভির কার্যালয়ে এসে এই হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই হুমকি সাংবাদিকদের এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে চলতে থাকা ভীতি প্রদর্শনের একটি বৃহত্তর প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নগর শাখার নামে ৭-৮ জন আমার অফিসে এসে হুমকি দেয় যে, আমি যদি চাকরি না ছাড়ি, তাহলে তারা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো অফিসে আগুন লাগিয়ে দেবে।”
নাজনিন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তিনি অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি জানিনা, বিক্ষোভকারীদের একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন যে, ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ পরিবেশন যথেষ্ট ছিল না। তিনি আরও জানিয়েছেন, “যুবকরাম্যানেজিং ডিরেক্টরকে বলেছিলেন, আপনারা নাজনিন মুন্নিকে কেন রেখেছেন? সে একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক। তাঁকে চাকরিতে রাখা যাবে না। তাঁকে সরিয়ে দিন।” তবে ডিরেক্টর স্পষ্ট করে দেন যে, নাজনিনের আসন্ন নির্বাচনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
তবে যুবকরা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি এবং ওই আধিকারিককে একটি লিখিত অঙ্গীকার দিতে বলেন যে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাজনিনতে অপসারণ করা হবে। ডিরেক্টর ওই নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। নাজনিন জানিয়েছেন, এতে যুবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা তখন হুমকি দেন, “আমরা যা চাই তাই হবে। প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারও কিছু করতে পারেনি। তাদের তুলনায় আপনি তো কিছুই নন।”
ভারতবিরোধী বক্তব্যের জন্য পরিচিত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, ৩২ বছর বয়সী হাদি ২০২৪ সালের ছাত্র অভ্যুত্থানের সময় খ্যাতি লাভ করেন। চলতি মাসের শুরুতে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের গুলিতে হাদি আহত হন। গত সপ্তাহে সেই আঘাতের কারণে সিঙ্গাপুরে মারা যান তিনি।
