আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতকে টুকরো না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে "সম্পূর্ণ শান্তি" ফিরবে না—এক অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এ ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি আরও দাবি করেন, ভারত নাকি "ইচ্ছাকৃতভাবে" বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
আজমি হলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন আমির এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত আবদুল গফর আজমের ছেলে—যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি ও হিন্দু নিধনযজ্ঞে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে কুখ্যাত।
ভারতকে অস্থিরতার নেপথ্য শক্তি বলে অভিযোগ
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজমি বলেন: “ভারত ভেঙে না গেলে বাংলাদেশে পূর্ণ শান্তি আসবে না। ভারত সবসময় এই দেশে অস্থিরতা জিইয়ে রাখে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসে (সিএইচটি) যে সশস্ত্র সংঘাত চলেছিল, সেখানে ভারত নাকি প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে ভূমিকা নিয়েছিল। আজমির অভিযোগ, “মুজিব সরকারের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) তৈরি হয়। এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনীকে ভারত সমর্থন দেয়। এই সমর্থনের ফলেই ২১ বছর পাহাড়ে রক্তপাত চলে।”
শান্তিচুক্তিকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে পিসিজেএসএস-এর মধ্যে যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেই চুক্তিকেও "প্রহসন" আখ্যা দিয়েছেন আজমি। তার অভিযোগ, শান্তিবাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করলেও প্রকৃতপক্ষে “অস্ত্র কখনও ফেরত দেওয়া হয়নি।”
উগ্র ইসলামপন্থী রাজনীতির উত্থান নিয়ে উদ্বেগ
আজমি বহুদিন ধরেই ভারতবিরোধী বক্তব্য এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতি নিয়ে আগ্রাসী মন্তব্য করে আলোচনায় থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মন্তব্য এমন সময় এসেছে যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক নতুন করে পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে। বর্তমান মুহাম্মদ ইউনুস প্রশাসনের অধীনে জামায়াতে ইসলামীর পুনরুত্থান, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তাদের ছাত্র সংগঠনের অপ্রত্যাশিত জয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় সামরিক বিশ্লেষক কর্নেল ময়ঙ্ক চৌবে মন্তব্য করেছেন: “এটি কোনও ব্যক্তিগত মন্তব্য নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘদিন গোপনে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ সীমান্তেই এমন শক্তি রয়েছে যারা প্রকাশ্যে ভারতের ভাঙনের স্বপ্ন দেখে, আর কূটনীতিতে হাসিমুখে হাত মেলায়।”
বাংলাদেশ নির্বাচন, খেলায় তিন শক্তি: বিএনপি, জামায়াত এবং ভারত
আগামী বছর বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনপি সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও জামায়াত অপ্রত্যাশিতভাবে শক্তিশালীভাবে ফিরে আসছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিএনপি এগোলেও জামায়াত তাদের কাছাকাছি অবস্থান করছে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিষিদ্ধ হওয়া দলটি এখন পুনরায় রাজনৈতিক ক্ষেত্র দখলের চেষ্টা করছে, এবং কিছু রাজনৈতিক মহল মনে করছেন—পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কৌশলগত প্রভাব এতে ভূমিকা রাখছে।
আজমির বক্তব্য শুধু ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দেয়নি, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নতুন উত্তেজনার সূচনা করেছে। এখন প্রশ্ন—এই মন্তব্য কি কেবল উগ্র রাজনৈতিক প্রচার, নাকি এর পেছনে বৃহত্তর কৌশলগত বার্তা লুকিয়ে আছে?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জোট-সমীকরণের এই পরিবর্তনশীল সময়ে ভারত পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে—এমনটাই ইঙ্গিত মিলছে কূটনৈতিক সূত্রে।
