আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও মধ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শনিবার ভয়াবহ দাবানলে অন্তত এক ডজন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দাবানলে পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে সেখানকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এম ১ প্যাসিফিক হাইওয়ে উভয় দিক থেকেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে নিউ সাউথ ওয়েলস জুড়ে ৭৫টিরও বেশি দাবানল জ্বলছে।
রুরাল ফায়ার সার্ভিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেশিরভাগ আগুন আপাতত “নিয়ন্ত্রণে” আনা গেছে। তবে এখনও অন্তত ১৯টি আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, এই দাবানলে সর্বোচ্চ ১৬টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট্রাল কোস্টের কুলেওয়ং এবং আপার হান্টার অঞ্চলের মিলসনস গালি। কর্তৃপক্ষ সেখানে বসবাসকারী মানুষদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে রাজ্যের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স বলেন, এটি অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং দিন এবং যাঁরা তাঁদের বাড়িঘর হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য এটি ছিল এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
সিডনির উত্তরে একটি দাবানলে অন্তত ছয়টি বাড়ি পুড়ে গেছে। একই সঙ্গে রাজ্যের মধ্য-উত্তর উপকূলীয় অঞ্চলেও বেশ কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। গৌলবার্ন রিভার ন্যাশনাল পার্কে ছড়িয়ে পড়া একটি দাবানল ইতোমধ্যেই ৯,০০০ হেক্টরেরও বেশি এলাকা গ্রাস করেছে, যা আগুনের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দেয়।
প্রিমিয়ার মিন্স জানান, এই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১,৫০০-এর বেশি দমকল কর্মী এবং প্রায় ৩০০টি যানবাহন মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা মানুষের জীবন রক্ষায় সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি।” একই সঙ্গে তিনি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেন, রুরাল ফায়ার সার্ভিস, নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ এবং ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগ যে নির্দেশ দিচ্ছে, তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের কমিশনার ট্রেন্ট কার্টিন জানান, কর্তৃপক্ষ আবহাওয়ার পরিবর্তনের ওপর কড়া নজর রাখছে। তাঁর কথায়, “আমরা আশঙ্কা করছি ভোর ২টা থেকে ৫টার মধ্যে বাতাসের দিক পরিবর্তন হতে পারে। এতে দমকল কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।” তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদেরও আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অনুরোধ জানান।
এরই মধ্যে দাবানলের ভয়াবহ দৃশ্যের একাধিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসকারী ডিন ন্যারামোর জানান, রাজ্যজুড়ে গরম ও শুষ্ক বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘণ্টা। গরমের সঙ্গে দমকা হাওয়া থাকায় আগুনের ঝুঁকি ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গেছে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকাল এলেই দাবানল একটি পরিচিত সমস্যা। বিশেষ করে গরম ও ঝোড়ো হাওয়ার দিনে কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রতিবছরই বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
