আজকাল ওয়েবডেস্ক: আরও একবার প্রমাণ হল তালিবানি শাসনে মেয়েদের অধিকারের দুর্দশা এবং বাল্যবিবাহের বাড়বাড়ন্তের চিত্র। দক্ষিণ আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ছয় বছর বয়সী একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন আফগান সংবাদমাধ্যম।
স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, জুন মাসের শেষের দিকে হেলমান্দের মারজাহ জেলায় এই বিয়েটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির ইতিমধ্যেই দু’টি স্ত্রী রয়েছে। তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে শিশুটিকে বিয়ে করেছেন ওই ব্যক্তি। এর জন্য শিশুটির পরিবারকে টাকাও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় তালিবান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং স্থানীয় চাপের মুখে, তালেবান কর্তৃপক্ষ লোকটিকে সাময়িকভাবে আটক করেছে। কিন্তু, বিয়ে বাতিল করার পরিবর্তে, তারা রায় দেয় যে শিশুটির বয়স নয় বছর না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তি শিশুটির সঙ্গে থাকতে পারবেন না।
২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই আফগানিস্তান জুড়ে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা এর কারণ হিসেবে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি এবং নারী ও মেয়েদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ, বিশেষ করে নারীশিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছেন। ২০২১-এর আগে আফগানিস্তানের আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ এবং ছেলেদের জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বেশিরভাগ নাগরিক আইন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যদি না সেগুলি তালিবানদের শরিয়া আইনে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বাল্যবিবাহের উপর নজরদারি বা বিচারের জন্য কোনও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। কিছু স্থানীয় আদালত দারিদ্র্য বা পারিবারিক বিরোধের ‘সমাধান’ হিসেবে বিবাহে উৎসাহ দিচ্ছে।
গত বছর জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা (ইউএন উইমেন) জানিয়েছে, মেয়েদের শিক্ষার উপর তালিবানি নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশজুড়ে বাল্যবিবাহ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সন্তান ধারণের হার ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫৭ শতাংশ আফগানি মেয়ের ১৯ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবং ২১ শতাংশ ১৫ বছরের নীচেই।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বারবার আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে। সতর্ক করেছে যে বাল্যবিবাহ মেয়েদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে এবং তাদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক ক্ষতি করছে।
