আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের বড়সড় ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে চলেছে অ্যামাজন। সূত্রের খবর, এ বার সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগ, যা অভ্যন্তরীণ ভাবে 'পিপল এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি' (পিএক্সটি) নামে পরিচিত, সেখান থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। ফরচুন পত্রিকার একাধিক সূত্রের দাবি, সব থেকে বড় কোপটি পড়তে চলেছে এই বিভাগের উপরেই, যদিও সংস্থার অন্যান্য বিভাগেও কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

 

ঠিক কত জন কর্মী চাকরি হারাতে চলেছেন বা কবে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সংস্থার ডিভাইস বিভাগ, পডকাস্ট শাখা এবং অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (এডব্লিউএস)-এ ছোটখাটো ছাঁটাইয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই এই নতুন ঘোষণা এক গভীর পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষত, সংস্থা যখন অটোমেশন এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে, তখন এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

 

এই ছাঁটাইয়ের আবহেও সংস্থা কিন্তু কৃত্রিম মেধা (এআই) এবং ক্লাউড ব্যবসায় কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। চলতি বছরেই পরিকাঠামো খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচের পরিকল্পনা করেছে অ্যামাজন, যার সিংহভাগই যাবে পরবর্তী প্রজন্মের ডেটা সেন্টার তৈরিতে। এই ডেটা সেন্টার সংস্থার অভ্যন্তরীণ কাজ এবং অন্যান্য গ্রাহকদের জন্য কৃত্রিম মেধার পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করবে।

 

২০২১ সালে জেফ বেজোসের উত্তরসূরি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আগামীর যুগ কৃত্রিম মেধার, এবং সব কর্মী এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন না। জুনে কর্মীদের পাঠানো এক ইমেলে তিনি লেখেন, "যাঁরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাবেন, কৃত্রিম মেধা সম্পর্কে পারদর্শী হবেন এবং আমাদের পরিষেবা উন্নত করতে সাহায্য করবেন, তাঁরাই সংস্থাকে নতুন করে উদ্ভাবন করতে পারবেন।"

 

এর পরেই ছিল প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি। জ্যাসি যোগ করেন, "আমরা আশা করছি, কৃত্রিম মেধার ব্যাপক ব্যবহারে সংস্থার সার্বিক কর্মী সংখ্যা কমবে, কারণ আমরা এর মাধ্যমে কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারব।"

 

জ্যাসির নেতৃত্বেই অ্যামাজন তার ইতিহাসে বৃহত্তম ছাঁটাই দেখেছে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ২৭,০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। সেই ছাঁটাইয়ের কারণ ছিল মূলত অতিমারি-পরবর্তী সময়ে মাত্রাতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ এবং গ্রাহকদের চাহিদার পরিবর্তন। কিন্তু এ বারের ছাঁটাইকে আরও বেশি কৌশলগত এবং কৃত্রিম মেধা-নির্ভর ভবিষ্যতের দিকে এগোনোর অঙ্গ হিসাবেই দেখা হচ্ছে।

 

বিষয়টির মধ্যে পরিহাসও দেখছেন অনেকে। এক দিকে যখন হোয়াইট-কলার বা ডেস্ক-জব করা কর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে, ঠিক তখনই উৎসবের মরসুমের জন্য বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করছে সংস্থা। সম্প্রতি অ্যামাজন ঘোষণা করেছে, উৎসবের চাহিদা সামাল দিতে তারা আমেরিকার গুদাম এবং লজিস্টিকস নেটওয়ার্কে আড়াই লক্ষ অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করবে।

 

সংস্থার অন্দরে জ্যাসি এক জন 'খরচ-নিয়ন্ত্রক' হিসাবেই পরিচিত। তিনি বিভিন্ন বিভাগকে এমন এক পর্যায়ে 'অশোচনীয় কর্মীত্যাগ' বজায় রাখার জন্য চাপ দেন, যেখানে কর্মীরা স্বেচ্ছায় বা পরিচালনগত কারণে সংস্থা ছাড়লে কর্তৃপক্ষের কোনও আক্ষেপ থাকে না। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, এ বারের ছাঁটাই সেই গতানুগতিক ছাঁটাই চক্রের চেয়ে আলাদা, যা এক বৃহত্তর কাঠামোগত রদবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: শাশুড়ির স্নানের ভিডিও তুলে 'নোংরা কাজ' করত জামাই, প্রতিশোধ নিতে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন স্ত্রী

 

কৃত্রিম মেধা-নির্ভর এবং আরও দক্ষ হয়ে ওঠার দৌড়ে অ্যামাজনের মানবসম্পদ বিভাগই হয়তো তার নিজের রূপান্তরের সবচেয়ে বড় শিকার হতে চলেছে। পিএক্সটি বিভাগের অনেক কর্মীর জন্যই হয়তো অমোঘ লিখন লেখা হয়ে গিয়েছে ডেটা সেন্টারের দেওয়ালে।