আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘের এক গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলই এখন বিশ্বের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরাট পরীক্ষাগার। এই অঞ্চলেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক ও ডিজিটাল বৈষম্য। এখানকার ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে প্রায় ২০০ গুণ ব্যবধান রয়েছে। কোথাও শক্তিশালী ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ও উন্নত পরিকাঠামো, আবার কোথাও ইন্টারনেট সংযোগ, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত ভিত্তির অভাব। এই বৈষম্যই ঠিক করে দেবে, কে এআই-এর সুফল পাবে আর কে পাবে না। 


রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঐতিহাসিক গতিতে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু সব দেশ একই জায়গা থেকে শুরু করছে না। পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিলে এআই আয়, সুযোগ এবং শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বাড়াতে পারে। এমনকি দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকের অগ্রগতিও উল্টে যেতে পারে।


বর্তমানে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি এআই ব্যবহারকারী রয়েছেন এবং প্রায় ৭০ শতাংশ এআই পেটেন্ট এখান থেকেই এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এআই এই অঞ্চলে জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রায় দুই শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে উৎপাদনশীলতা পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু এই লাভ সবার মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে না। যেসব দেশে ডিজিটাল সংযোগ, ডেটা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সীমিত, তারা শুরুতেই পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে। যেখানে কিছু দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে, আর অনেকেই পিছিয়ে পড়বে।


নারী ও তরুণদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও গভীর। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের হাতে থাকা চাকরি পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে কমবে। ইতিমধ্যেই এআই ক্ষেত্রে তরুণদের কর্মসংস্থান কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে যা তাঁদের কর্মজীবনের শুরুতেই বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম স্মার্টফোনের মালিক। ফলে ডিজিটাল সুযোগ থেকে তারা আরও দূরে রয়েছে। 


গ্রামীণ ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীও বড় সমস্যার মুখে। এর ফলে অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত বাড়ে এবং জরুরি পরিষেবা থেকেও তাঁদের বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

 


রাষ্ট্রসংঘের সহকারী মহাসচিব ও ইউএনডিপি-র এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান কান্নি উইগনারাজা বলেছেন, “এআই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বহু দেশ এখনও লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই অঞ্চল দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এআই গড়ে তোলা দেশগুলির সঙ্গে এআই দ্বারা প্রভাবিত দেশগুলির ব্যবধান বিশাল হয়ে উঠতে পারে।”