আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশ। নেপাল। মহম্মদ ইউনূস। সুশীলা কারকি। পর পর এই চারটি শব্দ যেন এখন এক একটি  আস্ত বাক্য। এই চার শব্দের কিংবা বাক্যের, যোগ ব্যাপক আকারের। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি থেকে তা স্পষ্ট।

এক বছর আগের জুলাই অভ্যুত্থানের বাংলাদেশ, আর এক বছর পরের জেন জি আন্দোলনের নেপাল।  এই দুই দেশ আগেও বারে বারে বিক্ষোভের, মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে। কিন্তু শেষ দুই বিদ্রোহ এতটাই প্রবল আঘাত হেনেছে, সরকার পড়েছে দুই দেশেই। এক্ষেত্রে ভূরাজনীতি, কূটনীতি নিয়ে আলোচনা বিস্তর। কিন্তু দু' দেশের বিক্ষোভ, বিক্ষোভকারী, বিক্ষোভের প্রকৃতি এবং সরকার পতনের ধাঁচ হুবহু যেন একই। সরকার পড়ে যাওয়ার পর, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান বেছে নেওয়ার পথ, অন্তবর্তী সরকার গঠন, তাও একই।

এতদূর মিল থাকলেও, পার্থক্য হল ঠিক তার পরেই। বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান পদে বসে, বহু সময় নিয়েছেন ইউনূস স্রেফ এক বিষয়ে। তা হল নির্বাচন। দেশের নানা রাজনৈতিক দল যখন 'ভোট কবে?' প্রশ্নে জেরবার করে তুলেছে রাজনীতির অলিন্দ, তখনও চুপ ছিলেন তিনি। সময় নিয়েছেন বিস্তর। সুশীলা এগিয়ে গেলেন এখানেই। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান, অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসলেন শুক্রবার রাতে। শনিবার ঘোষণা করে দিলেন, নেপালে সরকার গঠনের নির্বাচন কবে হবে।

শনিবার নেপাল অন্তবর্তী সরকারের প্রধান সুশীলা কারকি ঘোষণা করেছেন, ২০২৬-এর মার্চ মাসেই সে দেশে নির্বাচন হবে। সরকার ভেঙে যাওয়া, অর্থাৎ ওলির পদত্যাগের পরেই, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, সুশীলা শনিবারেই জানিয়েছেন, আগামী বছরের ৫ মার্চ, নেপালের ভোট। 

 

বুধবার জেন জি-রা ভার্চুয়াল বৈঠকে  নিজেদের পছন্দের কথা জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিক্ষোভকারীরা চাইছেন, নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি বসুন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে। ২৪ ঘণ্টা কাটেনি। বদলে যায় পছন্দ। জানা যায়, সুশীলা নয়, কুলমন ঘিসিংয়ের উপর আস্থা তাঁদের। ২৪ ঘণ্টা কাটেনি, শুক্রবার ফের জানা যায়, কুলমন নয়, আস্থা ফের সুশীলাতেই। শুক্রবার রাতে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

 

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, তাঁর রয়েছে ভারত-যোগ। তথ্য, সুশীলা বিরাটনগরের মহেন্দ্র মোরাং কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর, উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে বেনারস থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কারকি পরে নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ওই পর্বের পড়াশোনা শেষ হয় ১৯৭৮ সালে। বুধবার এক সংবাদ সাক্ষাৎকারে কারকি জানিয়েছেন, তিনি জেন জি-দের আবেদন মেনে, এই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। একইসঙ্গে তিনি তাঁর বিএইচইউ শিক্ষার কথা স্মরণ করেছেন। জানান, তিনি এখনও তাঁর প্রয়াত শিক্ষক এবং বন্ধুদের স্মরণ করেন ভিন দেশে বসেও। তাঁর মনে পড়ে গঙ্গার কথা, নদী তীরে হস্টেলের কথাও। 

 

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে রবিবার থেকে আন্দোলন সংঘঠিত হয় নেপালে। ক্রমে সোমে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বহু বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। সোমবার রাতে নেপাল সরকার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। মঙ্গলেও চলে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ। সরকার পড়ে যান সেদিনই। পদত্যাগ করেন ওলি। তারপর থেকেই অন্তবর্তী সরকার গঠন নিয়ে জল্পনা সে দেশে। অন্তবর্তী সরকার গঠনের পরেই জানা গেল, সরকার গঠনের ভোটের দিনক্ষণ।