আজকাল ওয়েবডেস্ক: তেহরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের সহযোগিতায় যুদ্ধে যোগ দিয়েছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের এই ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরই, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেইনি বিলম্ব না করে প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। 

খামেইনির প্রতিনিধি হোসেইন শরিয়তমাদারি একটি ইরানি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, ইরান বাহারিনে মার্কিন নৌবহরের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে এবং হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে। ইরান ইন্টারন্যাশনালের উদ্ধৃতি অনুসারে শরিয়তমাদারি বলেছেন, "এখন আমাদের দেরি না করে পদক্ষেপ করার পালা। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, আমাদের বাহারিনে মার্কিন নৌবহরের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে হবে। একই সঙ্গে আমেরিকান, ব্রিটিশ, জার্মান এবং ফরাসি জাহাজের জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে হবে।" 

ইরান এর আগে, একাধিকবার হরমুজ প্রণালী অবরোধের হুমকি দিয়েছে কিন্তু তা কার্যকর করেনি।

হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মধ্যে অবস্থিত এবং। এর উত্তর উপসাগরকে দক্ষিণে ওমান উপসাগর এবং এর বাইরে আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। বিশ্বের মোট তেল ব্যবহারের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই প্রণালী দিয়ে যায়। ওপেক সদস্য সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরাক তাদের বেশিরভাগ অপরিশোধিত তেল মূলত এশিয়ায় এই প্রণালী দিয়ে রপ্তানি করে। বাহারিনে অবস্থিত মার্কিন পঞ্চম নৌবহর এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল রক্ষা করার দায়িত্বে রয়েছে।

হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকির প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রতিক্রিয়া: 

পেন্টাগনের প্রাক্তন কর্তা মাইকেল রুবিন ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন যে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার চেষ্টা করলে ইরানই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন যে, এটি বেশ কয়েকটি দেশে এবং ভারতে কিছুটা হলেও তেল সরবরাহে স্বল্পমেয়াদী ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তার মতে, যদি তেহরান এই সংকীর্ণ জলপথ বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা ইরানের "আত্মহত্যা"র সামিল।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে মাইকেল রুবিন বলেছেন, "হরমুজ প্রণালী দিয়ে যে জ্বালানি যায় তার ৪০ শতাংশ এশিয়ায় যায়, বেশিরভাগই চীনে, তবে কিছুটা ভারতেও, তাই কিছু সময়ের জন্য জ্বালানি নিয়ে সমস্যার পড়তে হতে পারে। তবে, বিকল্প সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি প্রধান সরবরাহকারী। এছাড়াও মনে রাখবেন যে, ইরানকে পেট্রোল আমদানি করতে হবে। তাই ইরানিরা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার কথা বলতে পারে। কিন্তু তারা এক দিনের বেশি বন্ধ করে রাখতে পারবে না।"  

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের প্রাক্তন কর্তা জোনাথন শ্যানজারও সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার চেষ্টা করে তবে আমেরিকা "অবিশ্বাস্য শক্তি" দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

শ্যানজার বলেছিলেন, "হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার যেকোনও প্রচেষ্টার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফরাসি বা ব্রিটিশরা রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য আসবে তা কল্পনা করা খুব কঠিন নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, ইরানিরা যদি এই পথে যায় তবে তা একেবারেই আত্মঘাতী হবে।"
 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইজরায়েলের পক্ষে আমেরিকার সংঘাতে প্রবেশ করা উচিত কিনা তা সিদ্ধান্ত নিতে তিনি দুই সপ্তাহ সময় নেবেন। তবে ওই ঘোষণার ৭২ ঘন্টার মধ্যেই রবিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র- ফোরডো, নাতানজ এবং ইসফাহানে বোমা হামলা চালিয়েছে। এই সংঘাতে যা প্রথমবারের মতো সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ। 

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম ফোরডো ছিল ইরানের সবচেয়ে গোপন এবং কঠোর সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্র, যা ধ্বংস করার ক্ষমতা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিল। ট্রাম্পের মতে, আমেরিকার যুদ্ধবিমানগুলি একটি অত্যন্ত সফল আক্রমণ চালিয়েছে।"

এর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে, তেহরান ইজরায়েলের উপর নতুন হামলা শুরু করে।