আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম এলে বয়স, দেশ বা সমাজের চোখরাঙানি - কোনও বাধাই আর বাধা থাকে না। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের লিডসের বাসিন্দা ৭৪ বছরের ক্রিস্টিন হেয়কক্স এবং তাঁর ৩৪ বছরের তিউনিশীয় স্বামী হামজা দ্রিদির হৃদয়ছোঁয়া প্রেমের গল্প যেন সেই কথাই প্রমাণ করে।

তাঁদের মধ্যে বয়সের ফারাক প্রায় ৪০ বছরের। এক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে নিন্দুকেরও অভাব ছিল না। কিন্তু সব জল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে টিকে গিয়েছে তাঁদের সম্পর্ক।

 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে অনলাইনে হামজার সঙ্গে আলাপ ক্রিস্টিনের। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হামজাকে ইংরেজি শেখানো শুরু করেছিলেন তিনি। অনলাইনে ক্লাস শুরুর মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের মধ্যে প্রেম দানা বাঁধে। এমনকী প্রেমের টানে ক্রিস্টিন অল্প দিনের জন্য তিউনিশিয়ায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই যে গেলেন, আর ব্রিটেনে ফেরেননি।

 

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁরা একে অপরকে বিয়ে করেন। আলাপের পর থেকে গত সাত বছর তাঁরা একসঙ্গেই রয়েছেন তিউনিশিয়াতে। নতুন জীবন শুরুর কিছু দিন পরেই ২০২১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ক্রিস্টিন।

 

ক্রিস্টিনের কথায়, এ যেন ছিল 'প্রথম দেখাতেই প্রেম'। হামজাও স্ত্রীকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "ক্রিস্টিন এক জন অসাধারণ স্ত্রী। ও আমার রানি। আমি ওর ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধিমত্তার অনুরাগী।" এর আগে ক্রিস্টিনের ৩০ বছরের একটি সংসার ছিল, যা ২০০৩ সালে ভেঙে যায়। প্রথম পক্ষে তাঁর দুই সন্তান - ৪৪ বছরের এক ছেলে এবং ৩৯ বছরের এক মেয়ে। দু'জনেই তাঁর বর্তমান স্বামীর চেয়ে বয়সে বড়। ক্রিস্টিনের দুই নাতি-নাতনিও রয়েছে।

 

এই অসমবয়সী প্রেমের কাহিনি শুরু হয়েছিল ফেসবুকে ক্রিস্টিনের একটি বিজ্ঞাপন দেখে। তিনি ইংরেজি শেখানোর বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দেন হামজা। আর তার পরেই অনলাইন ক্লাস ছাপিয়ে শুরু হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প, যা শেষে গড়ায় প্রেমে। মাত্র তিন মাসের মাথায় হামজার সঙ্গে দেখা করতে দুই সপ্তাহের জন্য তিউনিশিয়ায় যান ক্রিস্টিন। পুরনো দিনের কথা মনে করে ক্রিস্টিন বলেন, "আমরা সমুদ্রের ধার দিয়ে হাঁটতাম, সুন্দর রেস্তরাঁয় খেতে যেতাম, ডিস্কোতে গিয়ে নাচ গান করতাম।"

 

হামজার চেয়ে চার বছরের বড় ক্রিস্টিনের ছেলে ২০২০ সালে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং চার দিন দম্পতির সঙ্গে কাটান। এর পরেই ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁরা বিয়ে করেন। ব্রিটেন থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসতে প্রায় দু'বছর দেরি হওয়ায় বিয়েটা পিছিয়ে গিয়েছিল।

বয়স বা সংস্কৃতির বিশাল পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ক্রিস্টিনের পরিবার বরাবরই তাঁর পাশে থেকেছে। তিনি বলেন, "আমার বাড়ির লোকেরা বুঝতে পারে আমি কতটা খুশি।" হামজাও ক্রিস্টিনের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত গল্প করেন, যা তাঁদের বিশ্বাস অর্জনে সাহায্য করেছে। ক্রিস্টিন যোগ করেন, "এখন আমাদের নিজেদের বাড়ি হয়েছে, আমি জীবনে এত খুশি কখনও হইনি।"

 

তবে এক্ষেত্রে সকলের শুভেচ্ছাবার্তা জোটেনি তাঁদের কপালে। অনলাইনে, বিশেষত ব্রিটিশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। ক্রিস্টিনকে পাঠানো হয়েছে একাধিক বিদ্বেষমূলক মেসেজ এবং ইমেল। অভিযোগ, হামজা কেবল টাকা বা ভিসার জন্য তাঁকে ব্যবহার করছে। ক্রিস্টিনের স্পষ্ট জবাব, "লোকে বলে ও আমার টাকা চায়, কিন্তু আমার তো বিশেষ কিছুই নেই, আমি এক জন সাধারণ শিক্ষিকা। অনেকে বলে ভিসার জন্য ও আমায় ব্যবহার করছে। কিন্তু হামজা ওর পরিবারকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারে না।" এমনকী এক মহিলা ক্রিস্টিনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবি করেন এই সম্পর্ক টিকবে না। ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, ব্রিটেনের লোকেদের কাছ থেকে সমালোচনা পেলেও তিউনিশিয়ার মানুষ কার্যত তাঁদের সমর্থনই করেছেন।

আরও পড়ুন: বন্যায় বড়সড় পরিবর্তন, বদলে গেল উত্তরবঙ্গের গন্ডারের চরিত্র, চিন্তার ভাঁজ আধিকারিকদের কপালে 

তবে বিদেশেও সব অভিজ্ঞতা মধুর নয়। ক্রিস্টিন জানান, এক বার তিউনিশিয়ার এক রেস্তরাঁর মালিক হামজাকে জিজ্ঞাসা করেন, "আপনি কী ভাবে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে যৌনতা করেন?" এই মন্তব্যে হামজা অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছিলেন। যদিও পরে ওই ব্যক্তি ক্ষমা চেয়ে তাঁদের নৈশাহারেও আমন্ত্রণ জানান।

এত বাধা এবং সমালোচনার পরেও ক্রিস্টিন এবং হামজা একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ এবং ভালোবাসায় অবিচল।