আজকাল ওয়েবডেস্ক: হুঙ্কারই বাস্তবে করে দেখাল আফগানরা। আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে পাকিস্তানি বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে তালিবান বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালাল।  ১১ অক্টোবর গভীর রাতে আফগানিস্তানের ২০১তম খালিদ বিন ওয়ালিদ আর্মি কর্পস নাঙ্গারহার এবং কুনার প্রদেশে ডুরান্ড লাইনের কাছে পাকিস্তানি সামরিক পোস্টগুলিতে আক্রমণ চালানো হয়। এতেই নিহত ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা।

হেলমান্দ প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র মাওলাভি মোহাম্মদ কাসিম রিয়াজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, বাহরামপুর জেলার ডুরান্ড লাইনের কাছে গত রাতে আফগান বাহিনীর প্রতিশোধমূলক অভিযানে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এই অভিযানের সময় আফগান বাহিনী তিনটি পাকিস্তানি সামরিক ফাঁড়িও দখল করেছে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করেছে।

কাবুল ও পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার পর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে আফগান বাহিনী হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, পাকতিকা, পাকতিয়া, খোস্ত, নাঙ্গারহার এবং কুনার প্রদেশে পাকিস্তানি পোস্টগুলিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করে। এই সমস্ত প্রদেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে অবস্থিত।

বিমান হামলা, তারপর প্রতিশোধ
বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে তিনটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। দু'টি কাবুলে এবং একটি দক্ষিণ-পূর্ব পাকতিকায়। তালিবান-নিয়ন্ত্রিত আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রক ইসলামাবাদকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। পাকি সেনার বিরুদ্ধে আফগান সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। আফগান সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, "কাবুলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে, তালিবান বাহিনী সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।" 

পরে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র এনায়েত খোয়ারজম সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন যে, "সফল" অভিযান মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাঁর কথায়, "যদি প্রতিপক্ষ আবার আফগানিস্তানের ভূখণ্ড লঙ্ঘন করে, তাহলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে প্রস্তুত এবং দৃঢ়ভাবে জবাব দেবে।"

যদিও বৃহস্পতিবারের হামলার পিছনে ইসলামাবাদের হাত রয়েছে বলে নিশ্চিৎ করেনি আফগানিস্তান। তবে তারা কাবুলের মাটিতে পাকিস্তানি তালিবানদের মদত দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানি তালিবান নামেও পরিচিত। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানি সংগঠনটি, আফগান তালিবানদের একটি স্বাভাববিক মিত্র এবং ২০০১-২০২১ সালের সংঘাতের সময় তাদের সহায়তা করেছিল।

২০২১ সাল থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), শত শত পাক সৈন্যকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে ইসলামাবাদ। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, "আজ সন্ধ্যায়, তালিবান বাহিনী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। আমরা সীমান্তের চারটি স্থানে প্রথমে হালকা এবং পরে ভারী কামান ছুড়তে বাধ্য হয়েছি।" তিনি আরও বলেন, "পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গুলি চালিয়ে বিস্ফোরক বহনকারী সন্দেহে তিনটি আফগান কোয়াডকপ্টারকে গুলি করে ধ্বংস করেছে। তীব্র লড়াই চলছে, তবে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।" 

এএফপির এক প্রতিবেদন অনুসারে, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গিরা আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায়- পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র হিংসাত্মক অভিযান তীব্রতর করেছে।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে যে, পাকিস্তানের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য যেসব জঙ্গি  আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করছে অনবরত তাদের খতম করতে ব্যর্থ। তবে, কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানের সতর্কীকরণ
এই বছরের শুরুতে, রাষ্ট্রসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, টিটিপি "সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে লজিস্টিক এবং অপারেশনাল সহায়তা পায়।" যা স্পষ্টতই কাবুলের তালিবান সরকারকে প্রতি ইঙ্গিত করেছিল।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ গত সপ্তাহে জাতীয় পরিষদে বলেছিলেন যে, আফগান তালেবানদের টিটিপিকে সমর্থন বন্ধ করতে রাজি করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, "আমরা আর এটা সহ্য করব না। ঐক্যবদ্ধভাবে, আমাদের অবশ্যই তাদের সহায়তাকারীদের জবাব দিতে হবে, তাদের আস্তানা আমাদের মাটিতে হোক বা আফগান মাটিতে হোক।" শনিবার, টিটিপি উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে মারাত্মক হামলার দায় স্বীকার করেছে, যার ফলে ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং তিনজন অসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।