আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানে মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোর ও ১২ বছরের এক কিশোরীর বিয়ের প্রস্তুতি ঘিরে দেশজুড়ে এবং আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আইনগতভাবে নাবালক-নাবালিকার এই বিয়ে নিষিদ্ধ হলেও, পরিবারের সম্মতিতে ‘বাত পাক্কি’ অনুষ্ঠানের ভুরিভোজের তালিকা থেকে যাবতীয় খুঁটিনাটি ভালভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম Reviewit.pk-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের রাতে ছয়বার নৈশভোজ খাবার পরেও আবার চেয়ে খেয়েছে ছেলেটি, এমনটাই জানা যাচ্ছে।  বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ ও বিস্ময়ের ঝড় উঠেছে।

পাকিস্তানে বর্তমানে পুরুষদের বিয়ের আইনগত ন্যূনতম বয়স ১৮ হলেও, মহিলাদের ক্ষেত্রে তা এখনও ১৬। আন্তর্জাতিকভাবে দুই লিঙ্গের ক্ষেত্রেই বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ নির্ধারিত হলেও, পাকিস্তানের আইন এখনও একে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয়নি। শুধু সিন্ধু প্রদেশ ২০১৩ সালে ১৮ বছর বয়সকে বিয়ের বাধ্যতামূলক ন্যূনতম বয়স হিসেবে ঘোষণা করলেও, দেশজুড়ে তা কার্যকর হয়নি। ফলে দেশটিতে এখনও বিভিন্ন অঞ্চলে নাবালিকা-বালকদের বিয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এবারের ঘটনাটি আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ছেলের চাপের কারণে। জানা গেছে, ১৩ বছরের ওই কিশোর তার পরিবারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—তাকে যদি পছন্দের মেয়েটিকে বিয়ে করতে দেওয়া না হয়, তবে সে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে না। ছেলের এই ‘আলটিমেটাম’-এর পর দুই পরিবার আলোচনায় বসে এবং শেষ পর্যন্ত বিয়েতে সম্মতি দেয়। পরিবার দু’পক্ষই জানিয়েছে যে তারা বিয়ের বিষয়ে ‘একই মত’ পোষণ করছেন। তবে ছেলেটির এই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার শর্ত বিপদ ডেকে এনেছে পাত্রীর ক্ষেত্রে। একদিনে বারবার একসঙ্গে পড়তে বসতে চাওয়ার 'আবদারে' বিরক্ত পছন্দের পাত্রী।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভিডিও বার্তায় দেখা যায়, দুই পরিবারের মা-রাই বিষয়টি সমর্থন করছেন। মেয়েটির মা—যিনি নিজে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন—বলেছেন, “ছোট বিয়েতে কোনও সমস্যা দেখি না, আমিও তো কম বয়সে বিয়ে করেছি।” অন্যদিকে ছেলেটির মা, যিনি ২৫ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তিনিও ছেলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।

ঘটনাটি সামনে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা। এক ব্যবহারকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “এটা এখন মাত্রাছাড়া হয়ে যাচ্ছে।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “এত ছোট ছেলের বাগদান! শুনছি ছেলের বাবা নাকি গুরুতর অসুস্থ, আর একমাত্র ছেলের মুখ দেখে নাকি এই অনুষ্ঠান—কী ভয়াবহ যুক্তি!” কেউ কেউ আবার ব্যঙ্গ করে বলেন, “যদি ছেলেটা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন সবই আগে থেকে ঠিক ছিল।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের মতো দেশে দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, সামাজিক রীতিনীতি এবং পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা এখনও শিশু বিবাহের অন্যতম কারণ। সরকার আইন কঠোর করলেও বাস্তব প্রয়োগে গলদ রয়ে গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের ঘটনা কেবল কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে না, বরং ভবিষ্যতে তাদের জীবনে নানাবিধ সংকট তৈরি করে।

এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে পাকিস্তানের প্রগতিশীল মহল এবং শিশু অধিকার সংগঠনগুলো জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে, “বাত পাক্কি হলেও বিয়ে সম্পন্ন হলে তা সরাসরি শিশু অধিকার লঙ্ঘন হবে। এর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এই ঘটনাটি পাকিস্তানে শিশু বিবাহ ঘিরে দীর্ঘদিনের বিতর্ককে আবারও সামনে এনে দিয়েছে—আইন থাকলেও প্রয়োগ কোথায়? এবং সমাজই বা কবে এই বিপজ্জনক প্রথা থেকে বেরোবে?