আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা কূটনীতি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বছরে মোট ১.৬৩ লক্ষ কোটিরও বেশি প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করে ভারত স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে তারা আর শুধু অস্ত্র ক্রেতা নয়, বরং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইজরায়েল ও রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত একাধিক বড় চুক্তিতে প্রযুক্তি হস্তান্তর, যৌথ উৎপাদন এবং গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে।


২০২৫ সালের অক্টোবরে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ঐতিহাসিক ১০ বছরের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক ঐতিহ্যগত মডেল থেকে সরে গিয়ে প্রকৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বে রূপ নেয়। চুক্তিতে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যৌথ উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ সামরিক মহড়া ও প্রতিরক্ষা উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল।


ফ্রান্সের সঙ্গেও ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। দুই দেশ ভারতে হ্যামার এয়ার-টু-গ্রাউন্ড প্রিসিশন অস্ত্র যৌথভাবে উৎপাদনের চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের আওতায় প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এই অস্ত্রের স্থানীয় উৎপাদন হবে। পাশাপাশি, পরবর্তী প্রজন্মের ফাইটার জেট ইঞ্জিন যৌথভাবে উন্নয়নের দিকেও অগ্রসর হয়েছে ভারত ও ফ্রান্স, যা প্রতিরক্ষা শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ইঙ্গিত।


ইজরায়েলের সঙ্গে নভেম্বর ২০২৫-এ স্বাক্ষরিত নতুন সমঝোতা স্মারক প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও গভীর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে যৌথ উৎপাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সাইবার সিকিউরিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়বে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে নিরাপত্তার পাশাপাশি, ভারতের হাতে আসবে ইজরায়েলের উন্নত সেন্সর, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ও এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তি।


রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের ঐতিহ্যবাহী কৌশলগত সম্পর্ক অটুট রয়েছে। ২২তম বৈঠকে দুই দেশ যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচির উপর জোর দেয়। এখনও ভারতের আমদানি করা সামরিক সরঞ্জামের ৬০ শতাংশের বেশি আসে রাশিয়া থেকে। তবে এখন এই অংশীদারিত্বের মূল লক্ষ্য সহ-উৎপাদন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত নির্মাণ এবং পুরনো প্ল্যাটফর্মগুলির আধুনিকীকরণ।

&t=145s


এদিকে, ভারতের ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল জুলাই ২০২৫-এ ১.০৫ লক্ষ কোটি এবং অক্টোবরে আরও ৭৯,০০০ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা ক্রয়ের অনুমোদন দেয়। এই সিদ্ধান্তগুলি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ লক্ষ্যকে আরও শক্তিশালী করেছে, যেখানে বিদেশি আমদানির বদলে দেশীয় নকশা, উন্নয়ন ও উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।