আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি এক দিল্লির যুবতীর সঙ্গে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। খবর অনুযায়ী, একজন ৩৮ বছর বয়সী দিল্লির যুবতী গর্ভবতী অবস্থায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ চার বছর ধরে 'অজ্ঞাত' এক ব্যথায় ভুগছিলেন। ২০১০ সালে তাঁর অস্ত্রপ্রচার হয়। বিদেশে জরুরি সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরপরই তাঁর পেটের নিচের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয়। চিকিৎসকরা তখন এটিকে সাধারণ পোস্ট-অপারেটিভ ব্যথা বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ক্রমশ বেড়ে যায়। একটা সময় এটি চরম আকার ধারণ করে। পরীক্ষার পর সেখানে একটি গাঁঠ দেখা দেয়।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে দিল্লিতে আরও পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবতী। এরপর চিকিৎসকরা আলট্রাসাউন্ড ও সিটি স্ক্যান করেন। রিপোর্টে সেখানে একটি সিস্ট ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা ধারণা করেন এটি একটি মেসেন্টেরিক সিস্ট হতে পারে। চিকিৎসকরা জানান এটি এক ধরনের মাইল্ড টিউমার, যা মাঝে মাঝে পেটে অস্বস্তি ও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

এরপর সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকরা যুবতীর এমআরআই স্ক্যান করেন। এখানেই জটিলতা আরও বেড়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, সিস্টের মধ্যে একটি পুরু ঝিল্লির মত কিছু দেখা যায়। ছবিটি দেখে চিকিৎসকরা অনুমান করেন এটি হয়তো ফিতাকৃমির (tapeworm) সংক্রমণ, যা দূষিত খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করেছে।

তবুও এটি যে আসলে কী তার চূড়ান্ত ফলাফল বোঝা না যাওয়ায় শেষমেশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সিস্টটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা দেখতে পান, সিস্টটি অন্ত্রের একটি অংশের সঙ্গে মিশে গিয়েছে, যা কেটে ফেলতে হয়। সফল অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।

অদ্ভুত বিষয় হল সিস্টের আকারটি ছিল প্রায় ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। অপারেশনের পর যখন এটি খোলা হয়, তখন ভিতরে পাওয়া যায় একটি সার্জিক্যাল স্পঞ্জ, যা সম্ভবত ওই যুবতীর সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল করে পেটের ভিতরে রেখে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকদের মতে, শরীর যখন কোনও অপ্রয়োজনীয় বিষয় দেখে , তখন সেটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু যেহেতু স্পঞ্জটি জীবাণুমুক্ত ছিল এবং সহজে ভাঙে না, তাই শরীর এটি ঘিরে তার চারপাশে একটি সিস্ট তৈরি করে ফেলে, যাতে সংক্রমণ না ঘটে।

এই অবস্থাকে গসিপিবোমা (gossypiboma) বলে। তথ্য অনুযায়ী ,অস্ত্রোপচারের সময় ভুল করে কোনও সামগ্রী যদি ভেতরে থেকে যায় তখন এটি ঘটে। বিশেষ করে তুলো বা স্পঞ্জ, রোগীর শরীরের ভিতরে রেখে দেওয়া হয়। যদিও এই ঘটনা বিরল বলে মনে করেছেন চিকিৎসকরা। তথাপি প্রতি ১,০০০ থেকে ১,৫০০ অস্ত্রোপচারে এমন ঘটনা একটি করে ঘটতে পারে, বিশেষ করে জরুরি অস্ত্রোপচার বা যখন অস্ত্রোপচার দলের সদস্য পরিবর্তিত হয়।

আরও পড়ুনঃ 'আমার পেটে ওর'ই সন্তান'! বিয়ের কিছুদিনের মাথায় এই কী বললেন নববধূ? গোপন সত্য ফাঁস হতেই ভেঙে পড়লেন স্বামী

সার্জিক্যাল স্পঞ্জ সাধারণত রক্ত মোছার জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু রক্তে ভিজে গেলে এগুলো শরীরের টিস্যুর সঙ্গে মিশে যেতে পারে, ফলে সহজে শনাক্ত করা যায় না। এই ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। জুলাই ১৬-এ প্রকাশিত লাইভ সায়েন্সের রিপোর্টে এমন ভুল প্রতিরোধে আরও কঠোর অস্ত্রোপচার প্রটোকলের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার জেরে বিশেষ করে, রেডিও-ডিটেক্টেবল স্পঞ্জ ব্যবহার ও অস্ত্রোপচারের আগে-পরে স্পঞ্জের সম্পূর্ণ হিসাব রাখা-এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, যাতে এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানো যায়।