আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইন্ডিগো বিমান সংস্থায় 'অপারেশনাল ক্রাইসিস' বা কর্মীদের অভাবজনিত সংকটের কারণে দেশজুড়ে বিমান পরিষেবা ভয়ঙ্করভাবে ধাক্কা খেয়েছে। এই কারণে হাজার হাজার যাত্রী আটকে পড়েছেন। অনেকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ভেস্তে গিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরেই বৃহস্পতিবার ৫২টি বিমান নামতে পারেনি এবং ৫০টি বিমান উড়তে পারেনি। ৪ ডিসেম্বরের তুলনায় এই সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি।
বিমানবন্দরে আটকে পড়া হাজারো যাত্রীর মধ্যে নমিতার দুর্দশা সবথেকে বেশি চোখে পড়ছে। টানা চার দিন ধরে ইন্ডিগোর অব্যবস্থার শিকার তিনি। জানা গিয়েছে কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে আছেন নমিতা। দু'হাতে বাবার অস্থির কলস ধরে নমিতা সরকারের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছেন, "আমাকে যেন জরুরি ভিত্তিতে হরিদ্বার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।"
নমিতা জানান, "আমার বাবার অস্থিভস্ম বিসর্জন দিতে কাল হরিদ্বার পৌঁছতেই হবে। আমার আজ বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি হয়ে দেরাদুন যাওয়ার কথা ছিল। অথচ ওরা (ইন্ডিগো) কোনও খবর না দিয়েই ফ্লাইট বাতিল করেছে।" এখন ইন্ডিগো অন্য এয়ারলাইন্সে টিকিট কাটার পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু অন্য সংস্থাগুলো টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিজনের জন্য প্রায় ৬০,০০০ টাকা। নমিতার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। তাঁর পক্ষে এই বিপুল টাকা দেওয়া অসম্ভব।
নমিতা আরও অভিযোগ করেছেন, এই মুহূর্তে ট্রেন বা বাসের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে তাঁদের হরিদ্বার থেকে যোধপুর যাওয়ার জন্য আগে থেকে কাটা ট্রেনের টিকিটগুলোও বাতিল হতে বসেছে। তিনি বলেন, "আমার বাবার অস্থি জরুরি ভিত্তিতে বিসর্জন দিতে হবে। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমার জন্য একটা ব্যবস্থা করা হোক।"
শুধু ধর্মীয় কাজ নয়, বিমানের এই গোলযোগের কারণে অনেকের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নষ্ট হয়েছে। ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে বেঙ্গালুরুগামী এক নবদম্পতি ফ্লাইট বাতিলের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। ফলস্বরূপ তাঁদের ভার্চুয়ালি অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশেষে বিবৃতি দিয়েছে ইন্ডিগো। সমাজমাধ্যমে তারা লিখেছে, "আমাদের প্রতিটি গ্রাহকের কাছে আমরা সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী।" সংস্থাটি জানিয়েছে, পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করতে তারা সবরকম চেষ্টা করছে। ফ্লাইট বাতিলের কারণ হিসাবে 'অপারেশনাল ক্রাইসিস'কে দায়ী করে ইন্ডিগো আশ্বাস দিয়েছে, বাতিল হওয়া টিকিটের সম্পূর্ণ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরত দেওয়া হবে।
তারা আরও ঘোষণা করেছে। ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ভ্রমণের জন্য বাতিল বা সময় পরিবর্তনের সমস্ত অনুরোধে ইন্ডিগো সম্পূর্ণ ছাড় দেবে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার হোটেল রুম এবং বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের খাবার ও পানীয় দেওয়া হচ্ছে। যেখানে সম্ভব, সেখানে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগও করে দেওয়া হচ্ছে।
