আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিজাব বিতর্কে নীতীশ কুমারের নতুন রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে মহিলাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। গিরিরাজ বুধবার বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী কোনও ভুল করেননি, কারণ চাকরি পাওয়ার জন্য পরিচয় নিশ্চিত করাটা ভোটের মতোই একটি অপরিহার্য অংশ। বৃহস্পতিবার সেই কথাই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

সংসদ চত্ত্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গিরিরাজ সিং বলেছেন, "কেউ যদি নিয়োগপত্র নিতে যান, তবে কি তার মুখ দেখানো উচিত নয়? এটা কি কোনও ইসলামিক রাষ্ট্র? নীতীশজি একজন অভিভাবকের মতো কাজ করছিলেন... আপনি যদি পাসপোর্ট নিতে যান, বা বিমানবন্দরে যান, তবে কি মুখ দেখান না? আপনারা পাকিস্তান এবং 'ইংলিশতানের' কথা বলেন। এটা ভারত এবং এখানে শুধু ভারতীয় আইনই চলবে। নীতীশ কুমার কোনও ভুল করেননি।"

এর আগে ওই মহিলা চিকিৎসকের ভাই জানিয়েছিলেন যে, নিয়োগপত্র পেলেও সরকারি চাকরি যোগ নিতে রাজি নন তাঁর দিদি। এ বিষয়ে গিরিরাজ বলেছেন, "সে অস্বীকার করুক বা জাহান্নামে যাক।" এই কথা বলেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান।

তীব্র প্রতিক্রিয়া
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে পিডিপি-র ইলতিজা মুফতি এক্স-এ পোস্ট করেছেন, 'এই লোকটার নোংরা মুখ পরিষ্কার করতে শুধু ফিনাইলই কাজ দেবে। আমাদের মুসলিম মা ও বোনদের হিজাব ও নিকাবে হাত দেওয়ার সাহস করবেন না। অন্যথায় আমরা মুসলিম নারীরা আপনাদের এমন শিক্ষা দেব যা আপনি এবং আপনার মতো লোকেরা চিরকাল মনে রাখবে।'

ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। সেদিন বিহারে অয়ুষ চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র বিতরণ অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই এক মহিলা চিকিত্‍সকের মুখ থেকে হিজাব টেনে নামিয়ে দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। চিকিত্‍সকদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছিলেন নীতীশ। ভিডিওতে দেখা যায়, হিজাব পরিহিত এক মহিলা চিকিৎসক মঞ্চে নিয়োগপত্র নিতে এলে ৭৪ বছর বয়সী জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমার তাঁর হিজাবের দিকে ইঙ্গিত করেন। মহিলাটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি হাত বাড়িয়ে হিজাবটি মহিলার মুখ থেকে টেনে নামিয়ে দেন, যাতে তাঁর মুখের কিছু অংশ দেখা যায়। এই কাজ করে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সেই সময় একটি নির্বিকার হাসিও দেখা যায়।

বিরোধী রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং কংগ্রেসের সমালোচনার ঝড়ের মুখে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড মুখ্যমন্ত্রীকে রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। শাসক দল জোর দিয়ে বলছে যে, ৭৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বয়স এবং বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার অভিযোগগুলো কেবল রাজনৈতিক হাতিয়ার, যা দিয়ে এক মাস আগে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফেরা ১০ বারের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। 

নীতীশের দলীয় সহকর্মী এবং বিহারের সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রী জামা খান বলেছেন, "নীতিশজি কেবল একজন মুসলিম মেয়ের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন মেয়েটি জীবনে সফল হওয়ার পর সমাজ তাঁর মুখ দেখুক।" মুখ্যমন্ত্রীকে বদনাম করার চেষ্টার জন্য বিরোধী দল এবং মুসলিম নেতাদের অভিযুক্ত করে খান বলেন, যারা মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন তাঁদের জানা উচিত যে তিনি মেয়েদের সর্বোচ্চ সম্মান দেন।

তবে, এনডিএ জোটের শরিক নিষাদ পার্টির নেতা এবং উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ তাঁর নিজস্ব সাফাই দিয়ে আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
একটি স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিষাদ প্রশ্ন তোলেন, নীতীশ কুমার যদি "অন্য কোথাও স্পর্শ করতেন" তাহলে কী হতো?
ভারত সমাচারকে তিনি বলেন, "আরে, তিনিও তো একজন মানুষ, তাই না, তাঁর পিছনে এভাবে লাগা উচিত নয়। হিজাব ছুঁয়েছেন বলেই এত কিছু হল... অন্য কোথাও ছুঁলে কী হতো!"