আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ সোমবার থেকে শুরু হল সংসদের শীতকালীন অধিবেশন, যেখানে সরকার মোট ১৪টি বিল পেশ করার পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। এই অধিবেশনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবিরে। বিশেষ করে নির্বাচনী তালিকার Special Intensive Revision (SIR) নিয়ে আলোচনা, দিল্লির সাম্প্রতিক বোমা হামলার প্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীরা আলোচনার দাবি জানিয়েছে।

সরকার জানিয়েছে যে সংসদের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও  বিষয়েই আলোচনা করা যেতে পারে, তবে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ—সরকার সংসদীয় প্রথা ও গণতন্ত্রকে “শেষ করে দিতে” চাইছে। তাঁদের অভিযোগ, এইবারের শীতকালীন অধিবেশনের সময়সীমা অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে, যার ফলে বিতর্ক ও আলোচনার সুযোগ সীমিত হয়ে উঠছে। সাধারণত শীতকালীন অধিবেশন ২০টি বৈঠক নিয়ে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ১৫টি।

এই অধিবেশনে যে ১৪টি বিল আনা হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Atomic Energy Bill, যা বেসরকারি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে Higher Education Commission of India Bill আনা হচ্ছে, যা একক কেন্দ্রীয় কমিশনের অধীনে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের লক্ষ্য রাখে। এছাড়াও তামাকজাত পণ্য ও পান মশলার উপর অতিরিক্ত শুল্ক ও সেস আরোপ করার বিলও সংসদে উঠবে।

এদিকে বিরোধী দলগুলো শ্রম আইনসহ চারটি নতুন Labour Code, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, দুষণ, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এবং কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্কের সমস্যা নিয়ে আলোচনা দাবি করেছে। বিশেষ করে বিরোধী দলের অভিযোগ— বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর তহবিল আটকে রাখা হচ্ছে এবং রাজ্যপালরা রাজ্যসভায় পাস হওয়া বিলের অনুমোদন বিলম্বিত করছেন, যা "সাংবিধানিক কাঠামোকে দুর্বল করছে।"

সংসদীয় কাজকর্ম নির্বিঘ্নে চালানো নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন—"প্রতিটি বিষয়ে আলোচনা সম্ভব, তবে তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে এবং Business Advisory Committee-ই আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করবে।" তিনি আরও বলেন, "বিরোধীরা সহযোগিতা করলে সংসদ যথাযথভাবে কাজ করতে পারবে।"

উল্লেখযোগ্যভাবে, "বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তি" উপলক্ষে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। লোকসভা এই আলোচনার জন্য বরাদ্দ করেছে ১০ ঘণ্টা, তবে তারিখ পরে নির্ধারণ করা হবে বলে স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়েছেন। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস বাদে বেশিরভাগ বিরোধী দল এই উদ্যোগে আগ্রহ দেখায়নি।

বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে NDA-র জয়ের পর এই প্রথম সংসদ বসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিজয়কেই সামনে রেখে সরকার সংসদে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে এবং বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা থাকবে।

এদিকে কংগ্রেস এই অধিবেশন ঘিরে কৌশল নির্ধারণ শুরু করেছে। রবিবার রাতে সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে মালিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে বসেন। আজও অধিবেশন শুরুর আগে তাদের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এই অধিবেশন চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিরোধীদের অভিযোগ—এটি "সংক্ষিপ্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" অধিবেশন—যার মাধ্যমে সরকার বিতর্ক এড়িয়ে দ্রুত আইন পাশ করাতে চায়। সংসদ বসতেই তাই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, আর আগামী দিনগুলোতে এই অধিবেশনে উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই রাজনৈতিকমহল মনে করছে।