আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার সন্ধে, ৬:৩৫ নাগাদ রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন দিল্লিতে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে পালাম বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা ভারতের বিমানবন্দরে নামতেই, করমর্দন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর, জড়িয়ে ধরলেন, মিত্র দেশের প্রেসিডেন্টকে। আমেরিকার ক্রমাগত হুঁশিয়ারি, শুল্ক-তোপের মাঝেই, এই দৃশ্য, এই মুহূর্ত রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের পর, প্রথমবার রুশ প্রেসিডেন্টের এই প্রথম ভারতে এলেন। ভূরাজনৈতিক মারপ্যাঁচের মাঝে, এই কারণেও পুতিনের ভারত-সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
করমর্দন, জড়িয়ে ধরার পর, দুই রাষ্ট্রনেতা একই গাড়িতে বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর, ভারত রাশিয়ার সমুদ্রপথে অপরিশোধিত তেলের একক বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০২১ সালে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির মাত্র ১ শতাংশ ছিল রাশিয়ান তেল, কিন্তু পশ্চিমি দেশগুলি রাশিয়ার জ্বালানি আয় কমানোর চেষ্টা করায়, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের আমদানি প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশে উন্নীত হয়। মার্কিন মুলুক এই ঘটনাকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিস্তর জলঘোলা করলেও, আজকের ছবি যে মার্কিন হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করার চরম দৃষ্টান্ত, একাধিক মহলের মত তেমনটাও।
শুক্রবারই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, তার আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে এবং তারপরে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ঐতিহ্যবাহী স্থান হায়দ্রাবাদ হাউসে এক কর্মদিবসের আয়োজন করা হবে। রাষ্ট্রপতি পুতিন সকালে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন।
দু'দিনের পুতিন-সফরে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কী কী আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে, তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা। রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চল থেকে নির্বাচিত ভারতীয় বংশোদ্ভুত রুশ বিধায়ক অভয় সিং বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফরকে ঘিরে ভারত যেন এস–৫০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের জন্য উদ্যোগী হয়। বিহারের পাটনায় জন্ম নেওয়া সিং জানিয়েছেন, ভারতের হাতে থাকা এস–৪০০ ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও এস–৫০০ রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, যা এখনও কোনও দেশকে সরবরাহ করা হয়নি। অভয় সিং বলেন, পুতিনের সফর “ভারতই শুধু নয়, রাশিয়াতেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।” তাঁর মতে, এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত মজবুত কৌশলগত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। “চার বছর পর পুতিনের ভারত সফর নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এই সফর দুই দেশের মধ্যে আরও ভালো কৌশলগত অংশীদারত্বের পথ প্রশস্ত করবে।'
তথ্য, ৪-৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফরের সময় ভারত ও রাশিয়া বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, কৃষি, মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই সফরেই ভারত-রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫তম বছর উপলক্ষে এবং দুই দেশের মধ্যে ২৩তম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে। ব্রহ্মোস তৈরির বিষয়েও দু'দেশের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সম্ভাবনা, সূত্রের খবর তেমনটাই। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ব্রহ্মোস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল। এই সাফল্যের উপর ভিত্তি করে, ভারত হালকা এবং আরও বহুমুখী সংস্করণের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মোস-এনজি, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানের বহরে এবং ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ট্রাইক করা যেতে পারে।
