আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস-সমর্থিত ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (USCIRF) নতুন এক আপডেটে অভিযোগ করেছে যে ভারতের রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে উৎসাহিত করছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিজেপি এবং আরএসএসের আন্তঃসংযুক্ত সম্পর্কের কারণে নাগরিকত্ব, ধর্মান্তর, গোরক্ষা এবং দণ্ডবিধির ২৯৫এ-এর মতো আইনগুলি বাস্তবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে। সংস্থাটির দাবি—ভারতের জাতীয় ও রাজ্যস্তরের আইনগুলোর প্রয়োগ ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর গুরুতর সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে, এবং সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণের ক্ষমতা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।
USCIRF জানিয়েছে, সংবিধানে কিছু সুরক্ষা থাকলেও কার্যত ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থাই এমন এক পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ক্রমবর্ধমানভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ছে। আরএসএসকে ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন’ হিসেবে বর্ণনা করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংগঠনটির মতাদর্শ ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করে। সংস্থাটি আরও বলেছে, আরএসএস সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের প্রচারেও তাদের অংশগ্রহণ রয়েছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে আরএসএসের যুব শাখায় যুক্ত ছিলেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০২ সালের দাঙ্গার সময় তাঁর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা রয়েছে—এই প্রেক্ষাপটও USCIRF তুলে ধরেছে। সংস্থাটির মতে, ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য তৈরি করে, কারণ এতে প্রতিবেশী দেশের অমুসলিম অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্বের দ্রুত পথ খোলা হলেও মুসলিমদের বাইরে রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যে কার্যকর ধর্মান্তর বিরোধী আইনগুলোর কারণে শত শত মুসলিম ও খ্রিস্টানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে রিপোর্টের দাবি। USCIRF জানিয়েছে, ভারতের কারাগারগুলিতে প্রায় ৭০ শতাংশ বন্দী বিচারাধীন এবং সংখ্যালঘুরা সেখানে অস্বাভাবিকভাবে বেশি। দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারাকে কার্যত ধর্মনিন্দা-বিরোধী আইনের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। উমর খালিদের দীর্ঘদিন ধরে বিচার ছাড়াই বন্দিত্বকেও সংস্থাটি ধর্মীয় বৈষম্যমূলক দমন-পীড়নের উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে।
ভারতের ফেডারেল রাজনৈতিক কাঠামোতেও সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছে USCIRF। রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই রাজ্যস্তরের অপরাধ তদন্ত করতে পারে না, যার ফলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনার ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব দেখা দেয়—এমনটাই জানিয়েছে তারা। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ জনতার হামলা বা দাঙ্গার ঘটনায় নিষ্ক্রিয় থাকে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে আরএসএস যুক্তরাষ্ট্রে একটি লবিং প্রচার শুরু করেছে, যেখানে মার্কিন লবিং সংস্থা Squire Patton Boggs-কে শত-সহস্র ডলার প্রদান করা হয়েছে। এ প্রচারের লক্ষ্য মার্কিন নীতি নির্ধারকদের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরা।
নতুন আপডেট প্রকাশের পর ভারত সরকার এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত USCIRF-এর বার্ষিক রিপোর্টকে ভারত পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল। রিপোর্টে ষষ্ঠবারের মতো ভারতের বিরুদ্ধে ‘কান্ট্রি অব পার্টিকুলার কনসার্ন’ ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়েছে, যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এখনও পর্যন্ত সে পথে হাঁটেনি।
