আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোবাইল গেমের আসক্তি। সেই আসক্তির জেরে শেষ ১৩ বছরের বালিকা। নতুন মোবাইল ফোন না পেয়ে আত্মঘাতী হল সে। ফাঁকা বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইলে গেম খেলতে ভালবাসত ওই ছাত্রী। কিন্তু পরিবার তাকে মোবাইল ফোন দিতে রাজি ছিল না। সেই অভিমানেই আত্মঘাতী হয়েছে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে নাগপুরের চাঙ্কাপুরের হনুমান মন্দিরের কাছে এক এলাকায়। ঘটনার সময় বাড়িতে একাই ছিল ১৩ বছরের বালিকা। বাইরে কাজে গিয়েছিলেন মা ও দিদি। ফাঁকা বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় সে। বাড়ি ফিরে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে মা ও দিদি। তড়িঘড়ি পুলিশে খবর দেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেহটি মায়ো হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। 

পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ছাত্রী মোবাইল ফোনে গেম খেলতে পছন্দ করত। তাই বারবার নতুন ফোন কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করছিল গত কয়েকদিন ধরেই। কিন্তু নতুন ফোন কিনে দিতে কেউ রাজি হননি। সেই রাগেই চরম পদক্ষেপ করে সে। 

গত আগস্ট মাসে এই রাজ্যে মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল‌। বারবার আবদার করেও, মোবাইল ফোন না পেয়ে চরম পদক্ষেপ করে ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর। মনখারাপের জন্য পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায়। সেই পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয় সে। কিশোরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা এলাকায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব তার পরিবার। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার ঘটনাটি ঘটেছিল ছত্রপতি শিম্বাজীনগর জেলায়। মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেয় ১৬ বছরের কিশোর। মৃত কিশোরের নাম, অথর্ব গোপাল ত্যাড়ে। গতকাল মায়ের সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটির পরেই চরম পদক্ষেপ করেছিল সে। 

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিশোর পুলিশের চাকরির চেষ্টা করছিল। পড়াশোনার জন্য মোবাইল ফোনটি তার প্রয়োজন ছিল। সহপাঠীদের কাছেও মোবাইল ফোন দেখে, তার ইচ্ছে হয় ফোন কেনার। কিন্তু তার কাছে টাকা ছিল না। গত কয়েকদিন ধরেই মায়ের কাছে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করছিল সে। কিন্তু প্রতিবার তার মা জানিয়ে দেন, এখন ফোন কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। ছেলের আবদার শুনেও প্রশ্রয় দেননি মা।

রবিবারেও ফোন কেনাকে কেন্দ্র করে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছিল মা ও ছেলের মধ্যে। এরপরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা তিসগাঁওয়ে পৌঁছে যায়। সেখানে পাহাড়ের উপরে উঠে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিশোর। স্থানীয়রা ছুটে এসে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

প্রসঙ্গত, গত বছরেও মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে খাস মহারাষ্ট্রে।‌ গত বছর মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায়, ১৫ বছর বয়সি এক কিশোর আত্মঘাতী হয়। সেবারেও মায়ের কাছে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করেছিল ওই কিশোর। রাগে, অভিমানে নিজের বাড়িতে আত্মঘাতী হয় সে। রাতে মা ও বোন ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই সময়েই ঘরের মধ্যে আত্মঘাতী হয় সে। 

গত বছর জুলাই মাসে মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বইয়ে একইরকম এক ঘটনা ঘটেছিল। সেবার আত্মঘাতী হয় ১৮ বছরের এক কিশোর। কারণ সেই মোবাইল ফোন। বাবার কাছে আইফোন চেয়েছিল কিশোর। কিন্তু দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে ছেলেকে আইফোন কিনে দেননি তার বাবা। বদলে একটি অন্য কোম্পানির স্মার্টফোন কিনে দেন ছেলেকে। আইফোন না পেয়ে মুষড়ে পড়ে কিশোর। বাবার সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এরপর আত্মঘাতী হয় সে। রাজ্যে পরপর একই ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুশ্চিন্তায় পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি বাড়ছে দিনের পর দিন। এই পরিস্থিতিতেই একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পুলিশের কপালেও।