আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঝাঁসির রেলওয়ে কলোনির একটি ভিডিও সম্প্রতি দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তি একটি কালো দেশি কুকুরকে (যা সাধারণভাবে ইন্ডি বা ইন্ডিয়ান প্যারিয়া ডগ নামে পরিচিত) দড়ি দিয়ে বেঁধে স্কুটারের পেছনে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কুকুরটি যন্ত্রণায় চিৎকার করে ছটফট করছে এবং শ্বাস নিতে লড়াই করছে। এই ঘটনা ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু স্থানীয় লোকজন তাঁদের মোবাইলে ধারণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়৷ ভিডিও ঘিরে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে , ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু পথচারি এবং পশু-অধিকার কর্মীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নানাভাবে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে পালটা আক্রমণাত্মকভাবে প্রতিক্রিয়া জানান এবং বলেন, 'এই কুকুরটি এলাকায় শিশুদের কামড়াচ্ছে, তাই আমরা এটিকে নিয়ে যাচ্ছি।' তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি জননিরাপত্তার স্বার্থেই এমন কাজ করেছেন।
এই ঘটনাটি সামনে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই এটি অমানবিক, বর্বর ও নিষ্ঠুর আচরণ বলে মনে করেছেন। পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা অনেক সংস্থা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন।
এমন এক সময়ে এই ভিডিওটি সামনে এসেছে, যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত-সুপ্রিম কোর্ট-সম্প্রতি দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (এনসিআর) কুকুর কামড়ানোর ক্রমবর্ধমান ঘটনা ও জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের এহেন নির্দেশ অনুযায়ী, বেওয়ারিশ কুকুরদের ধরার, নির্বীজ করার এবং স্থায়ীভাবে শেল্টারে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করতে হবে সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলিকে। আদালত সতর্ক করে জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, জনসাধারণের নিরাপত্তা অবশ্যই আবেগের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে এবং শিশুদের যেন ভয়ের মধ্যে নয়, নিশ্চিন্তে চলাফেরা করার অধিকার থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
তবে আদালতের এই নির্দেশকে ঘিরেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক পশুপ্রেমী, অধিকারকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, ক্রীড়াবিদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এর বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের দাবি, বেওয়ারিশ কুকুরদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ পশুদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। পাশাপাশি তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, সমস্যা সমাধানে আরও মানবিক ও কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিৎ।
এই পটভূমিতে ঝাঁসির ঘটনাটি জনসচেতনতা, আইন প্রয়োগ ও পশু-অধিকারের জটিল দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় পুলিশ ও পশু কল্যাণ দপ্তরের ওপর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চাপ বাড়ছে।
