আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বিজেপি সাংসদ বন্দি সঞ্জয় কুমার মঙ্গলবার ঘোষণা করেন, করিমনগর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে আসন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি-সমর্থিত প্রার্থীকে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত করলে সেই গ্রামকে তাঁর এমপিএলএডিএস তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এই ঘোষণা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এক্স-এ পোস্ট করে বন্দি সঞ্জয় কুমার লিখেছেন— “করিমনগরের গ্রামগুলো যদি সর্বসম্মতভাবে বিজেপি-সমর্থিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করে, তবে কোনও দেরি বা অজুহাত ছাড়াই সেই গ্রামকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। একজন সাংসদ হিসেবে আমার এমপিএলএডিএস তহবিল উপলব্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যেই CSR-এর মাধ্যমে কোটি টাকা এনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি তহবিল এনে পঞ্চায়েত উন্নয়নে লাগানো হবে।”
তিনি আরও দাবি করেন যে, বিজেপি ছাড়া অন্য দলগুলো— বিশেষ করে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) এবং কংগ্রেস — ক্ষমতায় থেকেও গ্রাম উন্নয়নের নামে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তেমন কোনও আর্থিক বরাদ্দ দেয়নি। কুমারের ভাষায়—“বিজেপি ছাড়া কেউ প্রকৃত অর্থে টাকা বরাদ্দ করে আনে না। ভুল করে যদি কংগ্রেস বা বিআরএস সমর্থিত প্রার্থী জিতে যায়, তবে নতুন কোনও তহবিল আসবে না, এমনকি কেন্দ্রের তহবিলও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।”
এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বিরোধী শিবিরে ক্ষোভ দেখা গেছে। ভোটারদের আর্থিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা— এটিকে অনেকেই নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে অভিযুক্ত করছেন। এই মন্তব্যের আগে, মহারাষ্ট্রে উপমুখ্যমন্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) নেতা অজিত পওয়ারও একই ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মালেগাঁও নগর পরিষদ নির্বাচনে তার দলের প্রার্থী হেরে গেলে উন্নয়নমূলক তহবিল প্রত্যাহার হতে পারে।
পওয়ার মন্তব্য করেছিলেন— “আপনারা ভোট দেবেন, আর আমি বরাদ্দ দেব। আপনারা প্রার্থী প্রত্যাখ্যান করলে, আমিও প্রত্যাখ্যান করব। আপনাদের কাছে ভোট আছে, আর আমার কাছে তহবিল।” এই মন্তব্যের পর মহারাষ্ট্রে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায়। শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) নেতা আম্বাদাস দানভে মন্তব্য করেন— “এটা সরাসরি ভোটারদের ভয় দেখানো। তহবিল অজিত পওয়ার বা কোনও দলের ব্যক্তিগত অর্থ নয়, এটি জনগণের করের টাকা।”
এনসিপি (শরদ পওয়ার গোষ্ঠী)-র মুখপাত্র মহেশ তাপাসে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন যে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারের এই ধরণের প্রয়াসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তেলঙ্গানায় গ্রামীণ পঞ্চায়েত নির্বাচন তিন দফায় আগামী ১১, ১৪ ও ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের এই ধরণের মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের প্রতিশ্রুতি ভোটারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এখন নজর Election Commission of India–এর দিকে— এই ধরণের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি না, সেদিকেই রাজ্যের রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে রয়েছে।
