নিতাই দে, আগরতলা: আজ শনিবার দুপুরে প্রয়াত বিধায়ক তথা ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের মৃতদেহ পৌঁছল আগরতলায়। বিমানে করে আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় তাঁর দেহ। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী-সহ রাজ্য সরকারের কর্মকর্তা এবং বিজেপি দলের নেতৃত্বরা।
বিমানবন্দর থেকে প্রয়াত অধ্যক্ষের মরদেহ ত্রিপুরা বিধানসভা ভবনে নিয়ে আসা হয়। বিধানসভায় তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু, মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা, মন্ত্রী রতনলাল নাথ, মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, আগরতলা পুরো নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
পরবর্তীতে প্রয়াত বিধায়ককে রাজ্য বিজেপি প্রদেশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীরা তাঁকে দলীয় পতাকা ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। এরপর উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরে তাঁর নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে রওনা হয়েছেন ত্রিপুরা সরকারের আরক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিজেপি নেতৃত্বরা।
উত্তর ত্রিপুরা জেলায় যাওয়ার পথে রাস্তায় বিজেপি দলের অন্যান্য নেতৃত্বরা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আগামিকাল রবিবার দুপুরে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এদিন বিধানসভায় শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের অকাল প্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ত্রিপুরার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা এক মহান ব্যক্তিত্ব ও ব্যতিক্রমী নেতা হিসেবে তিনি সর্বদা মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।'
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, 'গত ৮ আগস্ট সকালে আগরতলায় আমার সরকারি বাংলোতে দেখা করতে আসেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। যখনই আগরতলায় আসেন আমার সঙ্গে দেখা করে যান এবং এক কাপ চায়ের আবদার করেন। আমি তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিই। পরবর্তী সময়ে কয়েকটা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু পরে হঠাৎ করে খবর এল, ট্রেনে যাওয়ার সময় ট্রেনের বাথরুমের ভেতর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে গেছেন। সেখান থেকে দ্রুত তাঁকে ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এই খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করি এবং নিজেও হাসপাতালে যাই। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে এবং দ্রুত অপারেশন করতে হবে। অন্যথায় সমস্যা হবে।'
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'এরপর গ্রিন করিডোর করে আমার এসকর্ট দিয়ে তাঁকে আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে অপারেশন করা হয়। জমাট রক্ত বের করে নেওয়া হয়। রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালে বিধানসভার অধ্যক্ষকে দু'দিন রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের কথামতো উন্নত চিকিৎসার জন্য দু'দিন বাদে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে বহি:রাজের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যে ডাক্তার অপারেশন করেছিলেন তাঁর সঙ্গে আমি নিজেও কয়েকবার কথা বলেছি। ওই ডাক্তার এখানে সেমিনারে এসে আমার সঙ্গে দেখাও করেছেন। জীবন যুদ্ধের সঙ্গে তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি প্রায় কথা বলতাম। কিন্তু গতকালই সেই বেদনাদায়ক খবর আসে যে বিশ্ববন্ধু সেন আর নেই। যা আমাদের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি।'
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'প্রয়াত বিশ্ববন্ধু সেন আমাদের ভারতীয় জনতা পার্টির একজন বরিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ। বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নাটকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। যাত্রাপালার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ছিলেন কবি মানুষও। ১৯৭১ সালে এমবিবি কলেজে পড়ার সময় আমি সায়েন্স ও তিনি আর্টস বিভাগে পড়াশুনা করেছি। এরও আগে থেকে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। আমি একজন প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। আর ত্রিপুরাবাসীর জন্য একটা বিরাট ক্ষতি হল।'
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমাদের বিধানসভা তিনি যেভাবে পরিচালনা করতেন সেটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। ত্রিপুরাবাসীর জন্য তো ক্ষতি হল। আর আমারও ব্যক্তিগতভাবে বিরাট ক্ষতি হল।' মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'তিনি যেখানে গেছেন আমি ভগবানের কাছে তাঁর আত্মার সদগতি কামনা করি। সেই সঙ্গে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। এই অপূরণীয় ক্ষতি যেন সহ্য করতে পারেন।' ত্রিপুরা সংসদীয় রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতনে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোকজ্ঞাপন করেছেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে অধ্যক্ষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।
