আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চার মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার চাকাপাদ থানা এলাকার একটি জঙ্গলে এই সংঘর্ষ হয়। মৃতদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ মাও নেতা গণেশ উইকে। মৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলাও ছিলেন। নকশালবিরোধী অভিযানের দায়িত্বে থাকা একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, সিপিআই (মাওবাদী)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গণেশের মাথার জন্য ১.১ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি ওড়িশায় নিষিদ্ধ সংগঠনটির প্রধান ছিলেন।
পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী একজন আধিকারিক বলেছেন, “গুলির লড়াইয়ে চার মাওবাদী নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে ৬৯ বছর বয়সী গণেশ উইকে হিসেবে শণাক্ত করা হয়েছে। যিনি পাক্কা হনুমন্তু, রাজেশ তিওয়ারি, চামরু এবং রূপা নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার চেনদুর মণ্ডলের পুল্লেমালা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।”
ওড়িশা পুলিশ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স উইং থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কান্ধমাল জেলার চাকাপাদ থানা এলাকা এবং গঞ্জাম জেলার সীমান্তবর্তী রামভা বনভূমিতে ২৩টি দলের (২০টি এসওজি, ২টি সিআরপিএফ, ১টি বিএসএফ) সমন্বয়ে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আজ বেশ কয়েকবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এলাকাটিতে তল্লাশি চালানোর পর ইউনিফর্ম পরা চার মাওবাদীর (দুই পুরুষ ও দুই নারী) মৃতদেহ এবং দু’টি ইনসাস রাইফেল ও একটি .৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।”
আরও বলা হয়েছে, “নিহত মাওবাদীদের মধ্যে একজনকে গণেশ উইকে হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ওড়িশায় নকশালবাদী সংগঠনটির প্রধান ছিলেন। বাকি তিনজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণেশের মাথার ওপর ১.১ কোটি টাকার পুরস্কার ধার্য ছিল।”
প্রাথমিক শনাক্তকরণে জানা গিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন হলেন বারি ওরফে রাকেশ, যিনি বংশধারা-ঘুমুসার-নাগাবলি (বিজিএন) বিভাগের অধীনে রায়গড়ার এরিয়া কমিটির সদস্য এবং সুকমার বাসিন্দা। অন্যজন হলেন অমৃত, যিনি সাপ্লাই দলের সদস্য এবং বিজাপুরের বাসিন্দা। তবে, তাদের পরিচয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত দু’বছরে নকশালবিরোধী অভিযানে ৫০৩ জন মাওবাদীকে এনকাউন্টার করেছে। এই বছর শুধু ২৮৪ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে, যার মধ্যে বস্তার অঞ্চলেই ২৫৫ জন নিহত হয়েছে। গত বছর রাজ্যটিতে ২১৯ জন মাওবাদী নিহত হয়েছিল। যার মধ্যে বস্তার অঞ্চলেই ২১৭ জন। বস্তার অঞ্চলটি এই অভিযানগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা এখানেই ঘটেছে।
‘পুনা মার্গেম’ এবং ‘মাড় বাঁচাও অভিযান’-এর মতো সরকারি উদ্যোগগুলি মাওবাদী ক্যাডারদের আত্মসমর্পণে উৎসাহিত করেছে। যার ফলে ২০২৫ সালে শুধু নারায়ণপুর জেলাতেই ২৯৮ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। আত্মসমর্পণকারী প্রত্যেক মাওবাদী ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন এবং ছত্তিশগড় সরকারের পুনর্বাসন নীতি থেকেও তাঁরা উপকৃত হবেন। আত্মসমর্পণের সংখ্যা বৃদ্ধি মাওবাদীদের প্রভাবের অবক্ষয় এবং সরকারি প্রচেষ্টার প্রতি জনগণের আস্থাকেই তুলে ধরে।
