আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঝাড়খণ্ডের পঞ্চম তফসিলভুক্ত এলাকায় গ্রামসভাগুলির প্রশাসনিক ও সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে মঙ্গলবার পঞ্চায়েত (তফসিলি এলাকায় সম্প্রসারণ) আইন বা পেসা (PESA) বিধি অনুমোদন করল রাজ্য মন্ত্রিসভা। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পঞ্চায়েতি রাজ দপ্তরের প্রস্তাবটি সামান্য সংশোধনের সঙ্গে অনুমোদিত হয়। এদিনের বৈঠকে মোট ৩৯টি প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
নতুনভাবে অনুমোদিত বিধি অনুযায়ী, গ্রামসভাগুলি গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র বন সম্পদের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তুত করা এবং জলসম্পদ পরিচালনার উপর ক্ষমতা পাবে। বিধিগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর কার্যকর হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পঞ্চায়েতি রাজ দপ্তরের সচিব মনোজ কুমার জানান, পেসা আইন, ১৯৯৬ এবং গ্রামসভার ক্ষমতা বাড়ায় এমন অন্যান্য আইনের বিধান মেনেই এই নিয়মাবলি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, খসড়া বিধিতে গ্রামসভার সীমানা নির্ধারণ বা ডিলিমিটেশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যা জেলা প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
তবে এই পেসা বিধির ফলে পঞ্চায়েতি রাজ নির্বাচনে কোনও সরাসরি প্রভাব পড়বে না বলেও স্পষ্ট করেন মনোজ কুমার। তাঁর কথায়, “ঝাড়খণ্ড পঞ্চায়েতি রাজ আইন, ২০০১ পেসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই তফসিলি এলাকাতেও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন পদ্ধতিতে কোনও পরিবর্তন হবে না।”
রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডের ১৩টি জেলা সম্পূর্ণভাবে পঞ্চম তফসিলভুক্ত এলাকার অন্তর্গত, এবং আরও দুটি জেলার কয়েকটি ব্লক আংশিকভাবে তফসিলি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এই সব অঞ্চলে উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে গ্রামসভা গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, বিভিন্ন দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও পরামর্শের পরেই পেসা বিধি অনুমোদন করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “পেসার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই এই বিধিগুলি তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনার পর আইনটিকে তার মূল চেতনায়, বিশেষ করে তফসিলি এলাকার মানুষের জন্য উৎসর্গ করা হবে।”
মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা হয়। গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী দীপিকা পাণ্ডে সিং জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দিকনির্দেশ ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করেই এই বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের ২৫ বছর পূর্তিতে এটি দিশোম গুরু শিবু সোরেনের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হল।”
অর্থমন্ত্রী রাধা কৃষ্ণ কিশোর জানান, পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যা নির্বিশেষে প্রতি রাজস্ব গ্রামে একটি করে গ্রামসভা গঠনের বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর দাবি, “এটি রাহুল গান্ধীর ভাবনা ছিল, এবং মুখ্যমন্ত্রীও একই মত পোষণ করেছেন।”
নতুন পেসা বিধি কার্যকর হলে ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় স্বশাসন ও স্থানীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।
