আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ৯ বার তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।  ২১ মার্চ, দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনে হানা দেন ইডি-র বারো জন তদন্তকারী আধিকারিক। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর, রাত ন' টা নাগাদ গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। তথ্য, কেজরিওয়াল সাম্প্রতিক ভারতের সেই মুখ্যমন্ত্রী, যিনি ওই পদে থাকাকালীন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী কুরশিতে গ্রেপ্তারির আগে পর্যন্ত ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। কিন্তু গ্রেপ্তারির ঠিক আগেই, তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে তিনি দাবি জানান কেবল একটিই। তা হল, তাঁকে রাজভবনে নিয়ে যাওয়া। সেখান গিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং তাঁর পরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। 


কেজরিওয়াল তা করেননি। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন গ্রেপ্তার হন। অনেকেই ভেবেছিলেন, জেলে গিয়ে ইস্তফা দেবেন। দেননি। উলটে সাফ জানিয়ে দেন, জেল থেকেই দিল্লি চালাবেন তিনি। চালানও। ভিতরে বসে সিদ্ধান্ত নিতেন কেজরি, বাইরে থেকে দেখভাল করতেন অতীশি। জেলমুক্তির পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়েন এবং ওই সময়ের জন্য দিল্লির কুরশিতে বসেছিলেন অতীশি। কেজরি জানিয়েছিলেন, তিনি ফের জনগোনের ভোট জিতে ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রীর কুরশিতে। দিল্লির জনগণ যদিও আর তাঁর উপর আস্থা রাখেননি। আপ সরকার গিয়ে রাজধানীতে এখন গেরুয়া শিবির। যে কুরশিতে কেজরি জনগোনের সমর্থন নিয়ে আবার ফিরবেন ভেবেছিলেন,সেই কুরশিতে এখন রেখা গুপ্তা।

আরও পড়ুন: 'আরে ছাড় তো...', সিনিয়রকে খুন করে নিরুত্তাপ পড়ুয়া, অন্যের কথাতেও 'ডোণ্ট কেয়ার', সামনে এল হাড়হিম তথ্য...

তবে বুধবারের পর থেকে ফের চর্চায় তিনি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কেজরির কারণেই এই নিয়ম আনল কেন্দ্র। কেজরিওয়াল ছাড়াও, তালিকায় উঠে আসছে তামিলনাড়ুর মন্ত্রী সেন্থিল বালাজির মামলাও। ২০২৩ সালে দুর্নীতির মামলায় ডিএমকে মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের পর, তিনি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন চালিয়ে যান। মাদ্রাজ হাইকোর্ট এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হওয়া "সাংবিধানিক প্রহসন"। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। ডিএমকে নেতা ২০২৪ সালে জামিন পান এবং আবার মন্ত্রী হন। 

প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে! বুধবার লোকসভায় বিল পেশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় ১৩০ তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেন। বিল পেশ হওয়ার আগে থেকেই এর বিরোধিতায় সরব হন বিরোধী দলগুলির নেতারা। লোকসভায় বিল পেশ হতেই অধিবেশন কক্ষের অন্দরেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সাংসদেরা।


এই বিলের মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ সব বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে কেন্দ্রের এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সম্প্রতি বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতাদের গ্রেপ্তারির মতো ঘটনা ঘটেছে। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে অতীতে গ্রেপ্তার হতে দেখা গিয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে তা বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। আজকের দিনটিকে গণতন্ত্রের ‘কালো দিন’ বলছেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি বলছেন, এই বিল আসলে সুপার এমার্জেন্সি লাগু করার চেষ্টা। ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে চিরতের ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে মোদি সরকার। ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর হিটলারোচিত আঘাত হানা হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে। এটা আসলে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টার শামিল।'