আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনিল আম্বানির নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স গ্রুপের ওপর এবার আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া-র তদন্তের মধ্যে থাকা এই গ্রুপের বিরুদ্ধে এবার নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। অভিযোগ, রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্স এবং CLE প্রাইভেট লিমিটেড সহ একাধিক সংস্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও তহবিল তছরুপ হয়েছে।


সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে বিপুল মাত্রায় অর্থ পাচার ও কোম্পানিজ অ্যাক্টের একাধিক ধারায় লঙ্ঘনের ইঙ্গিত পাওয়ার পর বিষয়টি এখন সেরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। SFIO এই তহবিল প্রবাহের উৎস, স্থানান্তর এবং ব্যবস্থাপনার শীর্ষস্তরে দায় নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এল, যখন ইতিমধ্যেই ঋণে জর্জরিত রিলায়েন্স গ্রুপের বিরুদ্ধে ED তার তদন্তের গতি আরও বাড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সংস্থাটির প্রায় ৭,৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি সংযুক্ত করেছে ED। সংযুক্ত সম্পদের মধ্যে রয়েছে রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ৩০টি সম্পত্তি, পাশাপাশি আদার প্রপার্টি কনসালটেন্সি, মোহনবীর হাইটেক বিল্ড, গেমসা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, বিহান৪৩ রিয়েলটি ও ক্যাম্পিয়ন প্রপার্টিজের মতো সহযোগী সংস্থার মালিকানাধীন সম্পত্তিও। এই সম্পত্তিগুলি রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সঙ্গে যুক্ত একটি বহু-কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতি মামলার অন্তর্ভুক্ত।


ED-এর মামলাটি মূলত রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও তার সহযোগী সংস্থাগুলির ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে নেওয়া বিপুল ঋণকে ঘিরে। সংস্থাটির বকেয়া ঋণ ৪০,১৮৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যার মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক ওই ঋণকে ‘প্রতারক ঋণ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, এই তহবিলের বড় অংশ গ্রুপের অন্যান্য সংস্থায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে, সম্পর্কিত পক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এমনকি পুরনো ঋণ শোধ করতেও ব্যবহার করা হয়েছে, যা ঋণের শর্তের সরাসরি লঙ্ঘন।


ED-এর অভিযোগ, ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য নেওয়া অর্থ আসলে ব্যবহার হয়েছে আগের দেনা ‘এভারগ্রিনিং’ বা নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে। সংস্থাটির দাবি, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে RCOM ও তার সহযোগী সংস্থাগুলি হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়, যার মধ্যে ১৯,৬৯৪ কোটি এখনও বকেয়া এবং এই ঋণগুলি এখন নন-পারফর্মিং অ্যাসেট হিসেবে ঘোষিত।


তদন্তকারীদের মতে, অন্তত ১৩,৬০০ কোটি টাকা জটিল লেনদেনের মাধ্যমে অন্যত্র সরানো হয়েছে এবং এর একটি অংশ বিদেশেও পাঠানো হয়। রিলায়েন্স হোম ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও রিলায়েন্স পাওয়ার — এই সংস্থাগুলির নামও তদন্তে উঠে এসেছে।


আগস্ট মাসে CBI ও ED, অনিল আম্বানির বাসভবন ও অফিসে তল্লাশি চালায় এবং এক সিনিয়র অর্থনৈতিক আধিকারিককে গ্রেপ্তার করে। গত কয়েক বছরে অনিল আম্বানি গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থা দেউলিয়া বা মামলা-মোকদ্দমার মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যেই RCOM দেউলিয়া প্রক্রিয়ায় রয়েছে, অন্য সংস্থাগুলিও বিভিন্ন ব্যাংক ও ঋণদাতার পুনরুদ্ধারমূলক পদক্ষেপের মুখে।


MCA-র এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট, সরকার রিলায়েন্স গ্রুপের আর্থিক কারচুপির বিষয়টিতে গভীরভাবে নজর দিতে চাইছে। অন্যদিকে, ED-এর সম্পত্তি জব্দ ও ব্যাংকের ‘প্রতারক ঋণ’ ঘোষণার ফলে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স সাম্রাজ্য এখন আরও বড় আইনি ও আর্থিক সঙ্কটে।