আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'যেও না বাবা', বাড়ি থেকে বেরোনোর আগেই বাবার পথ আটকে দাবি করেছিল ছোট্ট মেয়ে। কয়েক মিনিট পরেই বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ বছরের মহম্মদ সাফি পারে। তাঁর আত্মীয়রা জানিয়েছেন, সেদিন সকাল থেকেই থানায় ছিলেন তিনি। মাঝে প্রার্থনার জন্য কিছুক্ষণের জন্য বাড়িতে এসেছিলেন। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে নিহত সাফির পরিবার জানিয়েছে, রাত ন'টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছিলেন ডিনার সারতে। ফেরার সময়েই তাঁর মেয়ে বাড়ি থাকার জন্য আবদার করেছিল। কিছুতেই বাবাকে যেতে দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু সাফি জানিয়েছিলেন, বাকি কাজকর্ম সেরে শীঘ্রই বাড়ি ফিরবেন। কিছুক্ষণ পরেই বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পরিবার। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালানোর পর হাসপাতালের এক ধারে সাফির দেহ পড়ে থাকতে দেখে তারা। 

সাফির এক আত্মীয় জানিয়েছেন, তিনি পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে কাজ করতেন। সংসারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। সাফির তিন সন্তান। গতকাল জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ঘোষণা করেছেন, বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের পরিবার পিছু এক লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে জম্মু–কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম থানায় বিস্ফোরণে অন্তত ন'জন মারা গিয়েছেন। অধিকাংশই পুলিশ এবং ফরেন্সিক দলের আধিকারিক। আহত অন্তত ২৯ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, আহতদের মধ্যে আরও পাঁচ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। 

জানা গেছে, সম্প্রতি হরিয়ানার ফরিদাবাদ এবং উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরণ পদার্থ বাজেয়াপ্ত করেছিল জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ। দুই ক্ষেত্রেই হরিয়ানা পুলিশ এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সহযোগিতায় তল্লাশি চলেছে। উত্তর ভারতের এই অভিযান থেকে মোট ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল। তাতে ছিল বোমা তৈরির মশলা এবং অস্ত্রশস্ত্র। শুধু ফরিদাবাদ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। পরীক্ষার জন্য তা কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাখা হয়েছিল নওগাম থানায়। সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। 

বাজেয়াপ্ত করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরীক্ষা করে দেখতে নওগাম থানায় বেশ কয়েকজন ফরেন্সিক আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। ঠিক কী কারণে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, গাফিলতি কার, এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই বিস্ফোরক পদার্থগুলিই দিল্লির লালকেল্লার সামনের বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান। যে গাড়িটি দিল্লির বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি ফরিদাবাদ থেকেই এসেছিল। 

নওগাম থানার ঘটনায় আহতদের ভারতীয় সেনার ৯২ বেস হাসপাতাল এবং শের–ই–কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে ভর্তি করানো হয়েছে। নওগামের ঘটনাস্থলে রাতেই পৌঁছন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এলাকা খালি করে দেওয়া হয়েছে।


জানা গেছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে আশেপাশের বিল্ডিংগুলিও কেঁপে ওঠে। থানা থেকে আগুনের শিখা ও কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের খবর পেয়েই আরও পুলিশ, দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্স ছুটে আসে।


পুলিশ দুটি বিষয় অনুমান করছে। এক, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যখন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সিল করা হচ্ছিল, সেখান থেকে কোনও কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে। দুই, এটাও সন্ত্রাসবাদী হামলা। বাজেয়াপ্ত করা একটি গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরক লাগানো ছিল।