আজকাল ওয়েবডেস্ক: হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী কান্চা গাচিবউলি অঞ্চলে বড় পরিসরে বৃক্ষনিধনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। আদালত এই বিষয়ে তেলেঙ্গানার মুখ্য সচিবকে ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং সমস্ত নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে ব্যাপক বন কেটে ফেলার প্রমাণ উঠে এসেছে। এই রিপোর্ট পর্যালোচনা করার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে, কেন এত তড়িঘড়ি করে বৃক্ষনিধন করা হলো? তেলেঙ্গানা সরকার কি এই কাজের জন্য যথাযথ পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে? বন দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এত বড় মাত্রায় বন উচ্ছেদ কীভাবে সম্ভব হলো? আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, "এখানে ময়ূর এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আছে, এর অর্থ এটি একটি বনাঞ্চল। তাহলে কী এমন জরুরি ছিল?"

আদালতে উপস্থাপিত ফটোগ্রাফিক প্রমাণে দেখা গেছে, প্রায় ১০০ একর জমি পরিষ্কার করা হয়েছে এবং সেখানে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। আদালত কড়া ভাষায় জানিয়ে দেয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সমস্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে, অন্যথায় মুখ্য সচিব ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন।

এছাড়া, আদালত মুখ্য সচিবকে সতর্ক করে বলেন, "আপনি যদি রাষ্ট্রের 'আতিথেয়তা' উপভোগ করতে চান, তাহলে কিছু করার নেই।" অর্থাৎ, আদালত পরোক্ষভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তেলেঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি দাবি করেন, "এই জমি বনভূমি নয়, এবং কোনো নতুন বৃক্ষনিধনও হচ্ছে না।" তবে আদালত যখন জিজ্ঞাসা করে গাছ কাটা হয়েছে কিনা, তখন রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "শুধু ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে।"

এই ইস্যু প্রথম সামনে আসে যখন ছাত্র এবং পরিবেশবিদরা সপ্তাহা শেষে বৃক্ষনিধনের বিষয়ে সরব হন। তাদের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ফলে বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। আরও রিপোর্টে উঠে এসেছে যে বন উচ্ছেদ স্থলের কাছাকাছি একটি হ্রদ রয়েছে, যা পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আদালতে নিযুক্ত অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের পরামর্শদাতা) জানান, কেন্দ্রীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটি ইতিমধ্যেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং বন উচ্ছেদের প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করতে একটি রিপোর্ট জমা দেবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, "সেটা পরে হবে, আপাতত এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করাই প্রধান কাজ।"

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের 'বন (সংরক্ষণ ও উন্নয়ন) বিধি' অনুসারে, পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নজরদারির জন্য রাজ্যগুলিকে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তেলেঙ্গানা সরকার ১৫ মার্চ ২০২৫-এ তার কমিটি গঠন করলেও, সুপ্রিম কোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যে কমিটি কাজ শুরু করার আগেই বন উচ্ছেদ শুরু হয়ে গেছে। আদালত প্রশ্ন তুলেছে, এত দ্রুত জমি পরিষ্কার করার জন্য কী তাড়াহুড়ো ছিল?

এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং বন দপ্তরের অনুমোদন সম্পর্কিত নথিপত্র আদালতে পেশ করতে হবে। তার আগে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কান্চা গাচিবউলিতে কোনো ধরনের নির্মাণ বা গাছ কাটার কাজ চলবে না।