আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরণের পর গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভারত–নেপাল সীমান্তে নজরদারি ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজনরা নেপালের পথ দিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই রুটটি অতীতে ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’-এর সদস্যরা ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানে পালানোর জন্য।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত ঠিক কতজন এই হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তদন্ত চলছে, এবং ফরিদাবাদে ধরা পড়া তথাকথিত “হোয়াইট কলার টেরর মডিউল”-এর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদিও এখনো বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি, তদন্তকারীরা আশাবাদী যে আসন্ন দিনগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং কোনও  সন্দেহজনক চলাফেরা চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে, প্রতিটি প্রবেশ ও নির্গমন কঠোরভাবে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

একইসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের শোপিয়ানে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেখানে একাধিক “ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার”-এর বিরুদ্ধে তল্লাশি চলছে, যাদের জঙ্গি সংগঠনের পুনরুত্থানে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, ফরিদাবাদের মডিউলটি জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত এবং তারা কাশ্মীর-ভিত্তিক জঙ্গিদের কাছ থেকে আদর্শিক ও লজিস্টিক সহায়তা পেয়েছিল।

তদন্তে উঠে এসেছে, মডিউলটির অন্যতম মূল সংগঠক হলেন মৌলবি  ইরফান আহমেদ। তিনি নাকি উগ্রপন্থার প্রচার চালিয়ে কয়েকজন তরুণকে সংগঠনে টেনে এনেছিলেন। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, দিল্লি বিস্ফোরণ সরাসরি এই মডিউলের কার্যকলাপের ফল।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করছে, এই বিস্ফোরণ জইশ-ই-মহম্মদের রণনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে। কাশ্মীরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে, বিশেষ করে পাহালগাম হামলার পর থেকে, সংগঠনটি এখন ভারতের মূল ভূখণ্ডের দিকে তাদের তৎপরতা সরিয়ে নিচ্ছে।

কাশ্মীরে অভিযানের সময় জামাত-ই-ইসলামির সদস্যদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনের কিছু সদস্য পাকিস্তান-ভিত্তিক হ্যান্ডলারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছিল। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে জামাতের পুনরুত্থান ঘটেছে, এবং সেই সংগঠন এখন পাকিস্তানের আইএসআই-এর সহযোগিতায় ভারতে নতুন করে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তদন্ত এখন দিল্লি বিস্ফোরণের সীমা ছাড়িয়ে এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে, কারণ ধারণা করা হচ্ছে এটি শুধুমাত্র একটি হামলা নয়, বরং দেশজুড়ে সমন্বিত নাশকতার পরিকল্পনার অংশ। ফরিদাবাদ থেকে আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে, যা থেকেই এই আশঙ্কা আরও জোরদার হচ্ছে।

মঙ্গলবার ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (এফএসএল) দল ফের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা দুটি কার্তুজ, যার একটি জীবিত ছিল, এবং দুটি ভিন্ন ধরনের বিস্ফোরকের নমুনা সংগ্রহ করেছে। মোট ৪০টি নমুনা বিস্তারিত রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, যাতে ব্যবহৃত উপাদানের গঠন ও উৎস নির্ধারণ করা যায়।

সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, তদন্তকারীরা আপাতত তিনটি মূল দিকের ওপর জোর দিচ্ছেন—সন্ত্রাসীদের পালানোর সম্ভাব্য পথ, কাশ্মীর-ভিত্তিক সংগঠনগুলির যোগাযোগ, এবং আন্তর্জাতিক অর্থ যোগানের  উৎস। গোটা ঘটনায় এখন দেশব্যাপী সতর্কতা জারি করা হয়েছে, বিশেষ করে উত্তর ও পূর্ব ভারতের সীমান্ত এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রয়েছে।

সব মিলিয়ে, দিল্লি বিস্ফোরণ শুধু একটি পৃথক ঘটনা নয়, বরং একটি বৃহৎ ও সুপরিকল্পিত নাশকতা-চক্রের অংশ হতে পারে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তদন্ত এখন এই ষড়যন্ত্রের প্রতিটি স্তর উন্মোচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে।