আজকাল ওয়েবডেস্ক:  প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও কার্যকর অস্ত্রগুলোর একটি হল সাপের বিষ। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, এই বিষ অন্য যেকোনও প্রাণীর আক্রমণাত্মক বা প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রের তুলনায় অনেক দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। প্রশ্ন হল—কেন?


সাপের বিষ মূলত একটি জটিল রাসায়নিক ককটেল, যেখানে শতাধিক ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিন ও এনজাইম থাকে। এগুলো শিকারের স্নায়ুতন্ত্র, রক্তজমাট বাঁধার প্রক্রিয়া কিংবা পেশির কার্যকারিতা অচল করে দিতে পারে। এই বৈচিত্র্যই বিষকে অত্যন্ত কার্যকর করে তোলে এবং একই সঙ্গে দ্রুত পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করে।


বিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হল প্রতিযোগিতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাপের বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে বাকি প্রাণীদের দেহে। তার জবাবে সাপের বিষের উপাদানেও পরিবর্তন আসে, যাতে প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়া যায়। এই ধারাবাহিক লড়াইয়ের ফলেই বিষের জিনগুলো দ্রুত মিউটেশন ও বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে যায়।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সাপের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। একটি সাপ প্রজাতি যদি ইঁদুর থেকে ব্যাঙ বা পাখির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে আগের বিষ নতুন শিকারের ক্ষেত্রে সমান কার্যকর নাও হতে পারে। ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের চাপে বিষের রাসায়নিক গঠন বদলে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, একই প্রজাতির সাপ ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাস করলে তাদের বিষের গঠনও ভিন্ন হতে পারে।


জিনগত দিক থেকেও সাপের বিষ অনন্য। বিষ তৈরির সঙ্গে যুক্ত অনেক জিন “ডুপ্লিকেশন” বা নকল হওয়ার মাধ্যমে বেড়েছে। এর ফলে একটি জিন নতুন কাজে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ পায়, আবার মূল জিন তার পুরনো কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া বিষকে দ্রুত নতুন ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।


সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, সাপের বিষের এই দ্রুত বিবর্তন মানব চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ওষুধ—বিশেষ করে রক্তচাপ ও হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ—সাপের বিষের উপাদান থেকেই উদ্ভূত।

&t=657s


সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিবেশ, শিকার-শিকারি সম্পর্ক, জিনগত কাঠামো এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের সম্মিলিত চাপে সাপের বিষ পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বিবর্তিত হওয়া প্রাণী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।