আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর বিলম্ব নয়, এবার কর্নাটক অস্বস্তি সমাধানে মরিয়া খাড়গে, রাহুল গান্দীরা। কংগ্রেস হাইকমান্ড কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে নয়াদিল্লিতে তলব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন উভয় শিবিরেরই উপোলব্ধি যে, কর্নাটকের রাজনৈতিক নাটকীয়তা নিয়ে হাইকমান্ড বেশ ক্ষুব্ধ। ফলে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উভয় শিবিরই নিজেদের অবস্থানে অনড়। চাপ বাড়াতে দুই গোষ্ঠীর বিধায়করা রাজধানীতে রয়েছেন। দিল্লি আশঙ্কা করছে, ঘটনাপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে দুর্বল করে তুলছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে যে, বৈঠকের অগ্রাধিকার এবং শীর্ষ এজেন্ডা হবে উভয় নেতাকে অবিলম্বে তাদের শিবিরের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বলা এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে- এমন প্রকাশ্য বিবৃতি বন্ধ করানো।

সূত্র জানিয়েছে যে দাবি, সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার গোষ্ঠীর চাপের কৌশল প্রকাশ্যে প্রচারের ফলে, কর্নাটক সরকার এবং জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন। হাত শিবির সূত্রে খবর, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির বিষয়টিতে "চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত" এখন রাহুল গান্ধীর উপর নির্ভর করছে।

সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নিউজ-১৮ এর প্রতিবেদন অনুসারে, কংগ্রেস হাইকমান্ডের ছয় সদস্যের মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটির মধ্যে, সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ডি কে শিবকুমারকে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী করার পক্ষে। তবে রাহুল গান্ধী এবং কেসি বেণুগোপাল সিদ্দারামাইয়াকেই পুরো মেয়াদের জন্য দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের অবস্থান কোন গোষ্ঠীর দিকে তা স্পষ্ট নয়।

বাকি মেয়াদের জন্য কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা অনিশ্চৎ। ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যার ফলে সরকার পরিচালনায় ক্ষতি হচ্ছে। সমস্যার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী শিবকুমার, উভয়ই হাইকমান্ডকে দক্ষিণী এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে চলমান বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে বলেছেন। 

তবে, কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সূত্র স্পষ্ট জানিয়েছে যে, "জানুয়ারি-মার্চের আগে কোনও মন্ত্রিসভায় কোনও রদবদল আশা করা যায় না।"

এদিকে, বিবাদে জল ঢালতে খাড়গে ঘনিষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ কংগ্রেস সভাপতিকেই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি তুলেছে। একজন বিশিষ্ট দলিত মুখ খাড়গে, কর্নাটকের রাজনীতিতে পা রাখার ফলে সে রাজ্যে দলের সমর্থনের ভিত্তি সুসংহত হতে পারে কিনা, নাকি এআইসিসি সভাপতি হিসেবে তাঁর বর্তমান অবস্থান অব্যাহত রাখা হবে- দলের অন্দরে নাকি তার বিবেচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে। কর্নাটকের একজন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা বলেছেন, "এটা এমন একটি বিষয় যা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী উভয়কেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"

শিবকুমারের গোষ্ঠীর বক্তব্যে সিদ্দারামাইয়া বিরক্ত। ডিকেএস শিবিরের অব্যাহত চাপ এমন ধারণা তৈরি করেছে যে- মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া যেন 'কথা খেলাপী'। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া গোষ্ঠীর যুক্তি, তাঁর শাসন রাজ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছে। ফলে মাধপথে তাঁকে অপসারণের কোনও যুক্তি নেই। একজন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা বলেন, "এখন মুখ্যমন্ত্রী পদে যে কোনও পরিবর্তন আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের সম্ভাবনার উপর প্রভাব ফেলবে। এটা দলকে বিভ্রান্ত বলে মানুষের মনে হতে পারে এবং বিরোধীরা এর পূর্ণ সুবিধা নেবে।" 

সূত্র জানিয়েছে, দিল্লিতে ডাকা হলে হাইকমান্ড মুখ্যমন্ত্রী এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী শিবকুমারের সামনে সামনে একাধিক বিকল্প উপস্থাপন করবেন:

বিকল্প ১
উভয় শিবিরকেই তাদের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেওয়া হবে, জানুয়ারি পর্যন্ত বিতর্কে স্থগিতাদেশ জারি করা হবে। এই কুলিং-অফ পিরিয়ডের পরেই মন্ত্রিসভা রদবদল বা নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করা হতে পারে। হাইকমান্ড নেতারা আরও উদ্বিগ্ন যে, কর্নাটকের ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে চলমান এসআইআর (রাজ্যভিত্তিক পর্যালোচনা) প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

বিকল্প ২
উভয় পক্ষের কথা শুনে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, মার্চ মাসে বাজেটের পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশা করা হচ্ছে। ততক্ষণ পর্যন্ত, সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমার- উভয়কেই বিধায়ক সংখ্যার দিক থেকে তাঁদের সমর্থন প্রদর্শন করতে বলা হতে পারে।

বিকল্প ৩
আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর নয়। কিন্তু সিদ্দারামাইয়াকে অবশ্যই একমত হতে হবে যে ২০২৮ সালের নির্বাচনের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, প্রচার কৌশল এবং নেতৃত্ব শিবকুমারের হাতে থাকবে। নির্বাচনটি ডিকেএস-কে মুখ হিসেবে তুলে ধরে লড়া হবে, যেখানে সতীশ জারকিহোলি, ডঃ জি পরমেশ্বর, এইচসি মহাদেবপ্পা বা ঈশ্বর খান্দ্রে-সহ অন্য কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে দৌড়ে নামতে দেওয়া হবে না।

বিকল্প ৪
দলিত নেতা হিসেবে খাড়গের পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে। কিছু সিনিয়র কংগ্রেস সদস্য যুক্তি দেন যে, খাড়গে এআইসিসি প্রধান হিসেবে থাকলে ভারতজুড়ে দল শক্তিশালী হবে, কারণ তিনি দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকজন নেতার মধ্যে অন্যতম, যাঁরা সাবলীলভাবে হিন্দি বলতে পারেন। এটি সারা দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করেছে। কর্নাটকে নেতৃত্বের পরিবর্তন এই গতিকে দুর্বল করে দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে।

বিকল্প ৫
সিদ্দারামাইয়া দিল্লিতে চলে যাবেন। প্রয়োজনে রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা করা হবে তাঁকে। যদিও সিদ্দারামাইয়া বারবার বলেছেন যে দিল্লিতে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই। তবে সূত্র বলছে যে, হাইকমান্ড এখন অচলাবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য এটিকে একটি বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে।

কর্নাটকের কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে যে, সিদ্দারামাইয়া, শিবকুমার এবং হাইকমান্ডের মধ্যে বৈঠক সম্ভবত আগামী রবিবার বা সোমবার হতে পারে, যার চূড়ান্ত তারিখ পরে জানানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।