আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের দীর্ঘদিনের বহু নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সমস্যার মূল উৎস পাকিস্তানের সেনাবাহিনী— এমনই স্পষ্ট মন্তব্য করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার এক আলোচনায় তিনি বলেন, ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির এবং আদর্শগত শত্রুতার মূল কেন্দ্র হচ্ছে পাকিস্তান সেনা প্রতিষ্ঠান। এই বাস্তবতা বুঝতে না পারলে উপমহাদেশের সমস্যার প্রকৃত চিত্র ধরা পড়বে না বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।


এস জয়শঙ্কর বলেন, “আপনি যখন সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির কিংবা ভারতের বিরুদ্ধে আদর্শগত বিদ্বেষের দিকে তাকান, তাহলে প্রশ্ন ওঠে— এর উৎস কোথায়? এর উত্তর একটাই— পাকিস্তান সেনাবাহিনী।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে সেনাবাহিনীই দেশটির নীতি ও আচরণ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে।


জয়শঙ্করের মতে, দু’দেশের সামরিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ রয়েছে। “আমাদের নিজেদের নিয়ে অতিমাত্রায় তুলনামূলক ভাবনায় আটকে পড়া উচিত নয়। বাস্তবতা হল— ভারতের অবস্থান ও সামর্থ্য আজ পাকিস্তানের থেকে অনেক আলাদা।


পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ঘিরে ওঠা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিদেশমন্ত্রী কটাক্ষের সুরে বলেন, “যেমন ভাল জঙ্গি ও খারাপ জঙ্গি বলে ভাগ করা হয়, তেমনই ভাল সামরিক নেতৃত্ব আর ভাল নয়— এমন নেতৃত্বও থাকে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেন।


অপারেশন সিন্দুর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর পরিষ্কার করে দেন যে ভারতের প্রত্যেকটি সামরিক বা কৌশলগত পদক্ষেপ নির্দিষ্ট নিয়ম, দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার মধ্যে থেকেই নেওয়া হয়। “আমাদের কিছু নীতি আছে। আমরা যা করি, তার জন্য জনগণ, সংবাদমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আমরা কী করতে পারি এবং কী করতে পারি না— তা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের ওদের সঙ্গে তুলনা করা অবাস্তব।


উল্লেখ্য, গত মে মাসে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত অপারেশন সিন্দুর চালায়। এই অভিযানে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মোট ৯টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানে অন্তত ৭০ জন জঙ্গি নিহত হয়। পাকিস্তান এর প্রতিক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অনিয়ন্ত্রিত ও নির্বিচার গুলিবর্ষণ শুরু করে বলে ভারতের অভিযোগ।


এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই শেষ পর্যন্ত দু’দেশ ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবুও সীমান্তে স্থায়ী শান্তি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, ভারত এখনও সংযম ও দায়িত্বশীলতার নীতিতেই আস্থা রাখে। তবে একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপোষ করা হবে না। তার মূল কারণ হিসেবে বারবার উঠে আসছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা— যা ভারতের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রে রয়েছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।