আজকাল ওয়েবডেস্ক:  অপারেশন সিন্দুরের সময় ভারতের সামরিক সাফল্যের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে রাশিয়ান নির্মিত S-400 এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম। ২০১৮ সালে ৫.৪৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে পাঁচটি রেজিমেন্ট ক্রয় করা হয়। এই বছরের মে মাসে ভারতের আক্রমণাত্মক অভিযানের সময় S-400 সিস্টেম পাকিস্তানের আকাশসীমার বহু শত কিলোমিটার ভেতরে থাকা শত্রু বিমান শনাক্ত করে, ট্র্যাক করে এবং ধ্বংস করে সম্পূর্ণ এয়ার ডমিন্যান্স নিশ্চিত করে।


এই সিস্টেমের কার্যকারিতা এতটাই প্রভাবশালী প্রমাণিত হয়েছে যে ভারত এখন আরও পাঁচটি অতিরিক্ত S-400 রেজিমেন্ট কিনতে আগ্রহী। একটি ভারতীয় S-400 রেজিমেন্টে থাকে ১৬টি লঞ্চার ভেহিকল, যা দুই ব্যাটারিতে বিভক্ত। প্রতিটি ব্যাটারি একটি কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সিস্টেম এবং সার্ভিল্যান্স ও এঙ্গেজমেন্ট রাডারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।


এবার মূল আকর্ষণ S-500 ‘প্রোমিথিউস’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের প্রাক্কালে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে S-500 Prometheus—S-400-এর উন্নত সংস্করণ নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন স্তরের একটি অস্ত্র-ব্যবস্থা। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, S-400-এর মতো সরাসরি কেনার বদলে S-500 ভারত–রাশিয়া যৌথ উৎপাদন চুক্তির আওতায় উৎপাদিত হতে পারে। রাশিয়ার আলমাজ-আন্তেই এবং একজন ভারতীয় অংশীদার মিলে সিস্টেমের অংশবিশেষ ভারতে তৈরি করবে—যা ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।


S-400 বনাম S-500: কোথায় বড় পার্থক্য?
রেঞ্জ ও উচ্চতা
S-400: সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৪০০ কিমি, সর্বোচ্চ ইন্টারসেপ্ট উচ্চতা ৩০ কিমি
S-500: রেঞ্জ ৫০০–৬০০ কিমি, ইন্টারসেপ্ট উচ্চতা ১৮০–২০০ কিমি 
এটি দেখায় যে S-500 শুধু আকাশ সীমা নয়—মিসাইল, ব্যালিস্টিক হামলা এবং নিকট-স্পেস পর্যন্ত কভার দিতে পারে।


কোন টার্গেট মোকাবিলা করতে পারে
S-400: যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল
S-500: এগুলোর পাশাপাশি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল, এমনকি হাইপারসোনিক গ্লাইড ভেহিকল প্রতিরোধ করার দাবি করা হয়
অর্থাৎ S-500 দেশের জাতীয় স্তরের পূর্ণাঙ্গ এয়ার ও মিসাইল ডিফেন্স হিসেবে কাজ করতে পারে।
ব্যবহৃত মিসাইল


S-400: 48N6, 40N6
S-500: উন্নত 77N6-N ও 77N6-N1, যা hit-to-kill ইন্টারসেপ্টর
এগুলো একেবারে নতুন প্রযুক্তির মিসাইল, যা সরাসরি আঘাত করে টার্গেট ধ্বংস করে।


কেন S-500 ভারতের জন্য গেম-চেঞ্জার?
S-400 যেখানে ট্যাকটিক্যাল ও অপারেশনাল হুমকি সামলায়, S-500 তৈরি হয়েছে স্ট্র্যাটেজিক লেভেলের হামলা, যেমন ব্যালিস্টিক মিসাইল আক্রমণ, ভবিষ্যতের হাইপারসোনিক অস্ত্র এবং স্যাটেলাইট-সমতুল্য উচ্চতার অবজেক্ট মোকাবিলার জন্য।


S-400 যেখানে অঞ্চল বা সেক্টরভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা দেয়, সেখানে S-500 সুরক্ষা দেবে সম্পূর্ণ নগরী, কৌশলগত কমান্ড সেন্টার, পারমাণবিক স্থাপনা ও জাতীয় পরিকাঠামোকে।
এর পাশাপাশি, S-400 ইতিমধ্যেই ভারতের বহুমাত্রিক এয়ার ডিফেন্স গ্রিডের সঙ্গে কার্যকরভাবে মিলেমিশে গেছে—আকাশ, MRSAM, SpyDer-এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিস্টেমের সঙ্গে। ফলে S-500 যুক্ত হলে ভারত বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী মাল্টি-লেয়ার্ড এয়ার ও মিসাইল ডিফেন্স নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবে।