আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার সরকারের নারী কর্মসংস্থান প্রকল্পে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বেশ কিছু পুরুষের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা জমা পড়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভুলবশত জমা হওয়া টাকা ফেরত দিতে নোটিশ পাঠিয়েছে। টাকা ফেরানোর সমন পেতেই তাঁদের দাবি, ভোট ফেরত দিক, তাহলেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল রাজ্যের প্রায় ১.৫৪ কোটি নারীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য উদ্যোগী করে তুলতে সাহায্য করার জন্য ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রশাসন সূত্রে দাবি, সরকারি নথিপত্রে গরমিলের কারণে কয়েকজন পুরুষের অ্যাকাউন্টেও এই টাকা জমা পড়েছে।
দারভাঙ্গা জেলার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জালে ব্লকে এই ভুলটি ধরা পড়েছে। যেখানে বেশ কয়েকজন পুরুষ অপ্রত্যাশিতভাবে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য নির্ধারিত টাকা পেয়েছেন। একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, তথ্য আপলোডের সময় একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই টাকা ভুল জায়গায় জমা পড়েছে।
অসঙ্গতি ধরা পড়তেই কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিস জারি করে পুরুষ প্রাপকদের কাছে টাকা ফেরত দিতে এবং পরিশোধের প্রমাণ, যেমন স্ক্রিনশট বা রসিদ, ব্লক প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট (বিপিআইইউ) অফিসে জমা দিতে বলেছে, যাতে রেকর্ড সংশোধন করা যায়। এখনও পর্যন্ত ১৪ জনকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
যাঁদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা পড়েছে তাঁরা অনেকেই গরীব। টাকা ফেরানোর নোটিস পাওয়ার পরেই সকলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নোটিসপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জন, নাগেন্দ্র রাম এবং বলরাম সাহনি জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই ঋণ পরিশোধ এবং পরিবারের চাহিদা মেটাতে টাকা খরচ করে ফেলেছেন।
শারীরিকভাবে অক্ষম এবং দৈনিক প্রায় ৩০০ টাকা মজুরিতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করা বলরাম সাহনি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পক্ষে এই টাকা ফেরত দেওয়া অসম্ভব। তিনি বলেন, “টাকাটা শেষ হয়ে গিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য এই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে।”
নাগেন্দ্র রাম টাকা ফেরানোর নোটিসের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং দাবি করেছেন যে তিনি এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সরকার আমাদের সঙ্গে সঙ্গে কেন জানায়নি? প্রায় তিন মাস পর কেন নোটিস এল?” সকলেরই অভিযোগ, নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এবং এনডিএ ক্ষমতায় ফিরে আসার পরেই এই নোটিসগুলি জারি করা হয়েছে।
অনেকেই একই সুরে অভিযোগ তুলেছেন, সরকার প্রথমে টাকা দিয়ে তাঁদের ভোট কিনেছে। এখন টাকা ফেরত চাইছে। নোটিস পেয়েছেন শারীরিক ভাবে অক্ষম এবং পাঁচ সন্তানের বাবা রাম। তিনি বলেন, “আমরা ভোট দিয়েছি, তারা জিতেছে, এখন তারা টাকা ফেরত চাইছে।” তিনি জানিয়েছেন, দীপাবলি এবং ছট পূজার সময় তিনি ১০ হাজার টাকা জামাকাপড় ও প্রয়োজনীয় গৃহস্থালির জিনিস কেনার জন্য খরচ করেছেন।
এই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে প্রমিলা দেবী নামের এক স্থানীয় মহিলা মন্তব্য করেন যে, “সরকার যদি টাকা ফেরত চায়, তবে নির্বাচনের সময় নেওয়া ভোটগুলিও তাদের ফেরত দেওয়া উচিত।”
প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রুটির কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, নোটিস পাওয়ার পর সাতজন গ্রামবাসী ইতিমধ্যেই টাকা ফেরত দিয়েছেন।
