আজকাল ওয়েবডেস্ক: সময় এগোচ্ছে। প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে। তবে তার সঙ্গেই বাড়ছে বিপদও। যেমন বিগত বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে এসেছে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা। এবার যা তথ্য সামনে এসেছে, তাতে চক্ষু চড়কগাছের জোগাড়। তথ্য, ২০২৪ সালে ডিজিটাল জালিয়াতিতে সাইবার অপরাধীরা ভারতীয়দের কাছ থেকে ২৩,০০০ কোটি টাকা চুরি করেছে।
সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েচ্ছে সম্প্রতি। এছাড়া এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে উল্লেখ করা প্রয়োজনীয়, বিগত মাসগুলিতে আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনা। বহু জায়গায়, বহু মানুষ এই ঘটনায় বড় অঙ্কের টাকা খুইয়েছেন।
সম্প্রতি দিল্লি-ভিত্তিক মিডিয়া এবং প্রযুক্তি সংস্থা DataLEADS অবাক করা তথ্য সামনে এনেছে ডিজিটাল জালিয়াতি প্রসঙ্গে। ওই সংস্থা তাদের গবেষণার পর রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, ২০২৪ সালে ভারতীয়রা সাইবার অপরাধী এবং প্রতারকদের কাছে ২২,৮৪২ কোটি টাকা হারিয়েছে। অর্থাৎ ছলে বলে কৌশলে চুরি গিয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।
পরিস্তিতি যেদিকে এগোচ্ছে, সেসব পর্যবেক্ষণে ভারতীয় সাইবার অপরাধ সমন্বয় কেন্দ্র, I4C, যা মূলত একটি ফেডারেল সংস্থা, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে, তারা মনে করছে গত বছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতি আর খারাপ হবে। আশঙ্কা, ভারতীয়দের ক্ষতির পরিমাণ এবছর বাড়বে আরও। এই বছর ১.২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি করবে।
২০২৪ সালের ডিজিটাল জালিয়াতির ভয়বহতা, পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছে, তা বোঝানোর জন্য প্রয়োজন তার আগের বছরগুলির পরিসংখ্যান তুলে ধরা। DataLEADS 'Cybercrime: Persistent and Emerging Risk of Online Financial Frauds and Deepfakes in India' বইয়ে উল্লেখ করেছেম ২০২২ সালে ভারতে সাইবার জালিয়াতির পাল্লায় পড়ে ক্ষতি হয়েছিল ২৩০৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ক্ষতির পরিমাণ এক বছরে বেড়ে যায় প্রায় তিন গুণ। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৪৪৬ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে নজর দেওয়া যাক ২০২৪ সালের ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষতির পরিমাণের দিকে। ২০২৪ সাল জুড়ে ভারতীয়রা ডিজিটাল জালিয়াতিতে প্রায় তিনগুণ বেশি টাকা খুইয়েছে।

শুধু অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি। বেড়েছে অপরাধ প্রসঙ্গে অভিযোগের সংখ্যাও। তথ্য, ২০২৩ সালে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত প্রায় ১৬ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়েছিল। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় কুড়ি লক্ষ। অথচ ২০১৯এর তথ্যের দিকে তাকালে দেখা যাবে অভিযোগ দায়েরের পরিমাণ অন্তত ১০-১২ ভাগ কম ছিল।
কিন্তু এই ক্রমবর্ধ্মান জালিয়াতির কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দিনে দিনে বাড়তে থাকা অনলাইন লেনদেন এর অন্যতম কারণ। তথ্য, পেটিএম এবং ফোনপে-এর মতো স্মার্টফোন-সক্ষম পরিষেবা - এবং হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মতো (যা অনেকে এনক্রিপ্ট করা এবং ব্যর্থ-নিরাপদ বলে মনে করেন) মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে আর্থিক বিবরণ নানা সময়ে ভাগ করে নেওয়ার প্রবণতা থেকেই বাড়ছে ঝুঁকি।
ফেডারেল তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জুন মাসেই ১৯০ লক্ষেরও বেশি ইউপিআই বা ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস লেনদেন হয়েছিল এবং এর মোট মূল্য ছিল ২৪.০৩ লক্ষ কোটি টাকা।
তবে মনে রাখতে হবে, এই জালিয়াতির আবার বেশকিছু ভাগ রয়েছে। যেমন ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত জালিয়াতি। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে যে ২০২৫/২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জালিয়াতি প্রায় আটগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জালিয়াতির ঘটনা ঘটে বিমা খাতেও।
