বছরের পর বছর ধরে আমরা শুনে আসছি, মুরগির মাংস হল প্রোটিনের অন্যতম উৎস। তাই ওজন কমাতে হোক কিংবা মাংসপেশি গঠন অথবা স্বাস্থ্যকর খাবার খুঁজতে গেলে ডায়েট চার্টে প্রথমেই উঠে আসে মুরগির মাংস। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এই ‘হেলদি প্রোটিন’-এর ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পারে একাধিক ভয়ঙ্কর ঝুঁকি, যা অনেকেই জানেন না।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বর্তমানে বাজারে যে মুরগির মাংস পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই ফ্যাক্টরি-ফার্মে অস্বাভাবিক দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নানা পদার্থ দিয়ে মুরগিকে বড় করা হয়। এর ফলে নিয়মিত চিকেন খাওয়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এমন সব সমস্যা, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আধুনিক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুরগির মাংসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কয়েকটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল শরীরে স্বাভাবিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। মুরগিকে দ্রুত বড় করার জন্য ব্যবহৃত নানা গ্রোথ-স্টিমুলেটর শরীরে ঢুকে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বিঘ্নিত করতে পারে।
এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের মুরগিতে এমন উপাদান থাকে, যা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বাড়ায়। ক্রনিক ইনফ্লেমেশন ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড সমস্যা এমনকী হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, এক্ষেত্রে ‘গাট ডিসবায়োসিস’ অর্থাৎ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আধুনিক চিকেনের ভেতরে থাকা রাসায়নিক, অ্যান্টিবায়োটিক ও বিভিন্ন অবশিষ্ট পদার্থ অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে, ফলে হজমের সমস্যা, পেটের অসুখ, গ্যাস, অ্যাসিডিটি এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, অনেক ফ্যাক্টরি-ফার্মড মুরগিতে পাওয়া যাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর ফলে সেই জীবাণুগুলিই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে দিতে পারে। এতে সাধারণ সংক্রমণও মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের বাজারে যে মুরগি পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই আর প্রাকৃতিক নেই। এগুলো অধিকাংশই ফ্যাক্টরিতে জন্মানো, স্ট্রেসে বড় হওয়া এবং নানা পদার্থ মেশানো একটি পণ্য মাত্র। আর মানুষ অজান্তে সেই খাবারই নিয়মিত গ্রহণ করছে। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, চিকেন সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন না হলেও অর্গানিক, অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগির মাংস কেনার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি চিকেন খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া এবং প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ, ডাল, ডিম, ছোলা ও টোফুকে গুরুত্ব দিতে পারেন।
