আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে বিশেষ নিবিড় পুনর্মূল্যায়ন (SIR) প্রক্রিয়া চলাকালীন ধারাবাহিক মৃত্যু, অস্বাভাবিক কাজের চাপ এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) দপ্তর। সোমবার দুপুরে অফিসের সামনেই বিক্ষোভে সামিল হলেন ব্লক লেভেল অফিসার (BLO) অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ— লাগাতার চাপ, অতিরিক্ত কাজের বোঝা ও অস্বাভাবিক টার্গেটের জেরে ডিএলও ও BLO–দের মৃত্যু বেড়েই চলেছে। কেউ আত্মহত্যা করছেন, কেউ আবার মারাত্মক মানসিক চাপ বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।

বিক্ষোভে যোগ দেওয়া BLO–রা অভিযোগ করেন, তাঁরা বারবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করতে অস্বীকার করেন। প্রায় ১২–১৫ জন শিক্ষক–শিক্ষিকা ও ৪ জন BLO সিইও দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, “CEO–র সঙ্গে দেখা না করে আমরা ফিরব না”, এই অবস্থানেই অনড় ছিলেন তাঁরা। ফলে সিইও দপ্তরের পরিবেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

 

রাজ্যের SIR পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে CEO–র অবস্থান

অন্যদিকে বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে SIR নিয়ে একাধিক তথ্য তুলে ধরেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। প্রক্রিয়াটির অগ্রগতি, BLO–দের কাজের চাপ, সম্ভাব্য ভুল–ত্রুটি এবং মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনিক অবস্থান— সব বিষয়েই ব্যাখ্যা দেন তিনি।

৯৯.৭৫% এনুমারেশন ফর্ম বিতরণ, ১.৫৩ লক্ষ BLO কাজ করছেন

CEO জানান—

রাজ্যে মোট ১,৫৩,৫৪১ জন BLO ফিল্ডে কাজ করছেন।

৯৯.৭৫% এনুমারেশন ফর্ম ইতিমধ্যেই ভোটারদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

সহকারী BLO–র জন্য ১৪,৯৯১টি বুথে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বহু জেলায় ১৩–১৪ হাজার BLO অসাধারণভাবে কাজ করেছেন বলে প্রশংসা করেন তিনি।


BLO–দের কাজের চাপ প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য

CEO বলেন—“এক লক্ষেরও বেশি BLO টাফ সিচুয়েশনে কাজ করছেন। এত বড় কাজের মধ্যে কিছু সমস্যা, ক্ষোভ বা ভুল–ত্রুটি থাকতেই পারে।"

তবে BLO–দের মৃত্যু বা আত্মহত্যা প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। শুধু জানান, জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট (মৃত্যু হলে পোস্ট–মর্টেম রিপোর্ট) চাওয়া হয়েছে এবং তা ECI–কে পাঠানো হবে।


“কড়া পদক্ষেপ নিতে চাই না”— CEO

মনোজ আগরওয়াল দাবি করেন—

অন্য রাজ্যে BLO–দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ থাকবে।

“আমরা শাস্তি দিতে চাই না। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত অপরাধ না করেন, তাঁর ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”


অসুস্থ BLO–দের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেলা DEO/ERO–দের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।


SIR–এর অগ্রগতি ও পরিসংখ্যান

CEO–র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী—

রাজ্যে মোট বুথ: ৮০,৬৮১টি

মোট ভোটার: ৭,৬৬,৩৭,৫২৯ জন

২৭ অক্টোবর ভোটারদের ঠিকানায় ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

নতুন বুথ হতে পারে ১৪,৯৯৭টি, যেসব বুথে ভোটার সংখ্যা ১,২০০ ছাড়িয়েছে সেগুলো পুনর্বিন্যাস হলে এই নতুন বুথ তৈরি হবে।

ইতিমধ্যেই ৪.৫৫ লক্ষ ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে (৫৯.৪%)

১০.৩৩ লক্ষ ফর্ম এখনও জমা পড়েনি (কারণ— অনুপস্থিতি, মৃত্যু, ডুপ্লিকেট বা স্থায়ীভাবে স্থানান্তর)।

১৮,৫৮,৩৮৪ ভোটারের এখনও ম্যাপিং হয়নি।


সেরা পারফর্মিং জেলা (ডিজিটাইজেশনের ভিত্তিতে):

১. পূর্ব বর্ধমান – ৬৬.৪৭%


২. আলিপুরদুয়ার – ৬৬.৪১%


৩. উত্তর দিনাজপুর – ৬৫.৪৪%


৪. মালদহ – ৬৫.২৩%


৫. পূর্ব মেদিনীপুর – ৬৫.২৭%

 

টপ পারফর্মিং বিধানসভা কেন্দ্র (২০টি):

গোসাবা, ক্যানিং, ফলতা, মোথাবাড়ি, কাকদ্বীপ, কোমরপুর, সাগর, বাসন্তি, সবং, কুমারগ্রাম, পিংলা, কেতুগ্রাম, গোয়ালপোখর, কাঁথি উত্তর, ভাঙড়, মগরাহাট পশ্চিম সহ আরও কয়েকটি।

১২১ জন BLO ইতিমধ্যেই ১০০% কাজ শেষ করেছেন

৫,৭৪২ জন BLO–র কাজ ৯০%–এর বেশি সম্পন্ন হয়েছে।

CEO বলেন—“২০ দিনের মধ্যে ফর্ম বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া, সংগ্রহ, ডিজিটাইজ— সব মিলিয়ে BLO–রা হিরোর মতো কাজ করেছেন।”

 

সংবেদনশীল প্রশ্নে এড়িয়ে গেলেন CEO

blo –দের মৃত্যু : সুনির্দিষ্ট মন্তব্য এড়িয়ে যান।

বুথ আবাসনে করার বিতর্ক : বলেন— এটা সম্পূর্ণ ECI–র সিদ্ধান্ত, তাঁর কোনও ক্ষমতা নেই।

CAA ক্যাম্প নিয়ে অভিযোগ : নির্বাচন কমিশনের কোনও ভূমিকা নেই বলে দাবি করেন।

BLA–দের OTP স্ক্যান : নির্দিষ্ট অভিযোগ না এলে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।


বিক্ষোভ থামবে তো?

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য—

SIR–এর চাপ অমানবিক।

BLO–দের মৃত্যু নিয়ে সরকার/কমিশনের উদাসীনতা অগ্রহণযোগ্য।

CEO–র সঙ্গে দেখা করার সুযোগ না দেওয়া “অপমানজনক”।


এদিকে CEO দপ্তর দাবি করছে—

সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে,

মৃত্যু হলে জেলা প্রশাসন রিপোর্ট দেবে,

BLO–দের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

SIR–এর কাজ যতই এগোচ্ছে, চাপ–দুর্ঘটনা–ক্ষোভ— সবই যেন সমান তালে বাড়ছে। BLO–দের বিক্ষোভ কি আরও জোরদার হবে? নাকি প্রশাসন কোনও সমঝোতার পথে আসবে— এখন সেদিকেই নজর রাজ্যবাসীর।