আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ভারতে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাঁর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানী দিল্লিতে তৈরি করা হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের উচ্চ প্রশিক্ষিত কমান্ডো, ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড, বিশেষ স্নাইপার টিম, ড্রোন, জ্যামার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নজরদারি—সব মিলিয়ে পাঁচ-স্তরের সুদৃঢ় নিরাপত্তা রিং মোতায়েন করা হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক, তা নিয়ে মার্কিন মুলুকের আপত্তি-সহ একগুচ্ছ ঘটনার পর, ভারতে আসছেন পুতিন। স্বাভাবিক ভাবেই একদিকে যেমন নিরাপত্তার কড়াকড়ি, অন্যদিকে জল্পনাও তুমুল, একাধিক বিষয় নিয়ে। ইতিমধ্যে জল্পনা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভারত সফরে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তা নিয়ে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, পুতিনের ভারত সফরকালে দু'দেশের একাধিক বিষয় সম্পর্কিত চুক্তিতে সই করতে পারেন রাষ্ট্রপ্রধানরা। 

তথ্য, ৪-৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফরের সময় ভারত ও রাশিয়া বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, কৃষি, মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই সফরেই ভারত-রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫তম বছর উপলক্ষে এবং দুই দেশের মধ্যে ২৩তম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে। ব্রহ্মোস তৈরির বিষয়েও দু'দেশের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সম্ভাবনা, সূত্রের খবর তেমনটাই। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে  অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ব্রহ্মোস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল। এই সাফল্যের উপর ভিত্তি করে, ভারত হালকা এবং আরও বহুমুখী সংস্করণের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মোস-এনজি, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানের বহরে এবং ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ট্রাইক করা যেতে পারে। 

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে পুতিনের এই প্রথম ভারত সফর। তথ্য, ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর সরকারি বাসভবনে একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করবেন।  ভারতে আসার পরদিন তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা পাবেন। এরপর মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধ রাজঘাটে শ্রদ্ধা নিবেদন, হায়দরাবাদ হাউসে শীর্ষ বৈঠক, ভারত মণ্ডপমে একটি বিশেষ ইভেন্ট এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ—তার কর্মসূচি বেশ ব্যস্ততাপূর্ণ।

এই গোটা সফরজুড়ে অভেদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়া থেকে চার ডজনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মী আগেই দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। দিল্লি পুলিশ ও NSG–এর সঙ্গে সমন্বয় করে তাঁরা পুতিনের কনভয়ের সম্ভাব্য সকল রুট বারবার পরীক্ষা করে দেখছেন। বিশেষ ড্রোনের মাধ্যমে কনভয়ের গতিবিধি নিরীক্ষণের জন্য একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হয়েছে, যা সফরের প্রতিটি মুহূর্তে সক্রিয় থাকবে। রুটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হবে অভিজ্ঞ স্নাইপার।

টেকনোলজি–নির্ভর নিরাপত্তাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জ্যামার, ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরা, লাইভ AI মনিটরিং সিস্টেমসহ উন্নত ইলেকট্রনিক নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে পুরো সফরজুড়ে। পুতিন দিল্লিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা রিং সক্রিয় হয়ে যাবে বলে সূত্রে জানা গেছে। প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে থাকবেন। বাইরের স্তরে থাকবে দিল্লি পুলিশ ও NSG, আর সবচেয়ে ভেতরের স্তর রাশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের হাতে।


তবে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই নিরাপত্তা গঠনে যুক্ত হবে ভারতের স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ (SPG) — যখন পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে থাকবেন। SPG তখন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অংশ হয়ে যৌথভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলয়টি গঠন করবে।