আজকাল ওয়েবডেস্ক: তামিলনাড়ুতে বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। শাসক দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজগম (DMK) প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি তুলে সুপ্রিম কোর্টে যায়, অন্যদিকে বিরোধী সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজগম (AIADMK) আবার SIR-কে “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ” হিসেবে সমর্থন করছে। ফলে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রশাসনিক কাজ এখন রাজনৈতিক লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে বিশেষ নিবিড় সংশোধন কাজ শুরু হয়েছে। অক্টোবর ২০২৫ অনুযায়ী তামিলনাড়ুর ২৩৪টি বিধানসভা আসনে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৭। এই বিস্তৃত কাজের জন্য ৬৮,৪৯৭ জন বুথ লেভেল অফিসার (BLO) বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে ফর্ম বিতরণ করছেন। রাজ্যে মোট বুথ লেভেল এজেন্টের সংখ্যা ২,৩৭,৩৯০ হলেও মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন মাত্র সীমিত সংখ্যক এজেন্ট।

নির্বাচন কমিশনের ১৯ নভেম্বরের দৈনিক বুলেটিন অনুযায়ী, মোট মুদ্রিত ফর্মের ৯৫.১৬% – অর্থাৎ ৬ কোটি ১০ লাখের বেশি ফর্ম – ইতিমধ্যেই ভোটারদের হাতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৭.৩৭% ফর্ম সংগ্রহ ও ডিজিটাইজ করা সম্ভব হয়েছে। ফর্ম পূরণে প্রযুক্তিগত জটিলতাই এর অন্যতম কারণ।

শুরু থেকেই DMK SIR-এর তীব্র বিরোধিতা করছে। ২ নভেম্বর সর্বদলীয় বৈঠকের পর তারা সুপ্রিম কোর্টে যায়। দলের সংগঠন সম্পাদক আর. এস. ভরথি দাখিল করা হলফনামায় অভিযোগ করেন যে এত অল্প সময়ে এত বড় কাজ শেষ করা সম্ভব নয় এবং এর ফলে লক্ষ লক্ষ বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়ে যেতে পারে। তিনি দাবি করেন, এটি ভোটারদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর “অপরিবর্তনীয় ক্ষতি” ডেকে আনতে পারে।

১১ নভেম্বর DMK নেতৃত্বাধীন সেক্যুলার প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স রাজ্যজুড়ে জেলা সদর দপ্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্টালিন এক্স-এ লেখেন, “SIR বন্ধ করাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এই বিপদ থেকে মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে।”

AIADMK সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে SIR–এর সমর্থনে অবস্থান নেয়। ১৪ নভেম্বর সালেমে সাংবাদিক বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক এডাপাডি কে. পলানিসামি বলেন, “মৃত ব্যক্তি, অন্যত্র চলে যাওয়া মানুষ এবং ভুয়ো ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে SIR দরকার। এতে নির্বাচন আরও নিরপেক্ষ হবে।”

তবে সমর্থন করলেও AIADMK বর্তমান প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ তুলেছে। দলের রাজ্যসভার সাংসদ আই. এস. ইম্বাদুরাই ৭ নভেম্বর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন যে অনেক ক্ষেত্রেই BLO-দের পক্ষপাতদুষ্টভাবে নিয়োগ করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় DMK কর্মীদের হাতে ফর্মের গুচ্ছ তুলে দেওয়া হয়েছে।

ইম্বাদুরাই আরও অভিযোগ করেন, “চেন্নাইয়ে বেশিরভাগ BLO চুক্তিভিত্তিক কর্মী। যদি কোনও ভুল হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। এমনকি চেপক-তিরুভাল্লিকেনি আসনে DMK–রই একজন BLA-2 আবার অন্য ওয়ার্ডে BLO হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।” তিনি জানান যে এই অভিযোগগুলি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ও সুপ্রিম কোর্টে বিস্তারিত হলফনামা জমা দেওয়া হবে।

ভোটারদের বড় অংশই নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের নাম ২০০২/২০০৫ সালের SIR তালিকায় খুঁজে পাচ্ছেন না। ওই তালিকা মেশিন-রিডেবল নয়, ফলে PDF ফাইলের মধ্যেই হাজারের বেশি নাম খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে। EPIC নম্বর দিয়েও সার্চ করা যাচ্ছে না। এই প্রযুক্তিগত বাধাই ফর্ম জমা দিতে দেরির প্রধান কারণ বলে BLO-রা জানিয়েছেন।

এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এর মধ্যে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নভেম্বর–ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর বর্ষার মৌসুম হওয়ায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাইয়ের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। অথচ এই পর্বটি শেষ হওয়ার কথা ৪ ডিসেম্বর।

SIR–এর কাজে যুক্ত BLO–রা বলছেন, তাঁদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ BLO–ই গ্রাম সহকারী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা শিক্ষক। যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিয়েই তাঁদের মাঠে নামানো হয়েছে। জেলা কালেক্টররা প্রতিদিন তিনটি করে পর্যালোচনা বৈঠক করছেন, যার ফলে BLO–দের মানসিক চাপ আরও বাড়ছে।

১৮ নভেম্বর রাজস্ব বিভাগের বিভিন্ন কর্মী সংগঠন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে জানান যে তিন মাস সময় ছাড়া এই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। সংগঠনের সমন্বয়কারী আর. অরুলরাজ জানান, “আমরা শুধু SIR–এর কাজই করছি না। একই সময়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ ও নিয়মিত দাপ্তরিক দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। SIR কাজের জন্য আলাদা কোনও তহবিলও দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের মানসিক চাপ চরমে পৌঁছেছে।”