আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৩,৭০০ ফুট উচ্চতায় বিস্তৃত ১,২৩৫ একরের উপর দাঁড়িয়ে থাকা নায়োমা এয়ারবেস বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতের কাছে এটি একটি বিরাট অগ্রগতি। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (LAC) থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঘাঁটি কেবল ভৌগোলিক দিক থেকেই নয়, কৌশলগত গুরুত্বেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 


নায়োমা এয়ারবেসের উৎপত্তি বেশ পুরোনো। ১৯৬২ সালে এটি প্রথম তৈরি হয় একটি অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড (ALG) হিসেবে। ২০০৯ সাল থেকে সীমিত অপারেশনাল থাকলেও, দীর্ঘ সময় ধরে এটি কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ পরবর্তীতে লাদাখে সামরিক কাঠামো শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা দ্রুত বাড়ায়, আর সেই সঙ্গে বেড়ে যায় এর কৌশলগত গুরুত্ব। সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত সিদ্ধান্ত নেয় এই এয়ারস্ট্রিপকে পূর্ণমাত্রায় চালু করা এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান পরিচালনার উপযোগী করে তোলা।


২০২১ সালে প্রকল্প হিমাঙ্ক–এর অধীনে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনকে (BRO) প্রায় ২১৮ কোটি টাকার বাজেটে এয়ারবেসটি আধুনিকায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে নতুন ২.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রানওয়ে, সঙ্গে রয়েছে আরও একাধিক অবকাঠামো—যেমন হর্ডেন্ড এয়ারক্রাফট শেল্টার (HAS), উচ্চতায় উপযোগী জ্বালানী সংরক্ষণাগার, অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC) টাওয়ার এবং অন্যান্য সহায়ক সুবিধা। এসব উন্নয়ন এই ঘাঁটিকে শীত, তুষারঝড় ও -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো আবহাওয়ার মধ্যেও “অল-ওয়েদার অপারেশন” সক্ষম করেছে।


নায়োমা এখন পূর্ণাঙ্গভাবে ফাইটার অপারেশনের জন্য প্রস্তুত। এখান থেকে সুখোই-৩০ এমকেআই, রাফালে, মিগ-২৯ UPG–র মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এবং C-130J ও C-17–এর মতো ভারী পরিবহন বিমান পরিচালিত হবে। এর ফলে সীমান্তে সেনা, সরঞ্জাম ও যুদ্ধাস্ত্র দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব হবে, যা সংকটমুহূর্তে প্রতিক্রিয়ার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে।


লাদাখ অঞ্চলে সেনা স্থাপনার জন্য ইতিমধ্যেই DRDO অন্তত ২০,০০০ সেনার আবাসন সুবিধা তৈরি করেছে। এতে ভবিষ্যতে আরও অবকাঠামো সম্প্রসারণে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি সাসোমা–সাসার–DBO বিকল্প রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর সঙ্গে সংযোগ আরও শক্তিশালী করবে। নায়োমার মতো উচ্চতায় এয়ারবেস কার্যকর রাখা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন কাজ; কিন্তু এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনার ক্ষমতার প্রতীক এবং প্রতিবেশী দেশের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা—লাদাখে ভারতের কাঠামো উন্নয়ন আরও দ্রুত এবং আরও আধুনিক রূপ নিতে চলেছে।


এই এয়ারবেস কার্যকর হওয়া মানে শুধু বিমান পরিচালনা নয়, এটি LAC অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত আধিপত্য আরও সুদৃঢ় করবে, এবং ভবিষ্যতের যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারতকে দেবে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভান্টেজ।