আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোপাল খেমকা, অজিত কুমার, রমাকান্ত যাদব, বিক্রম ঝা, জিতেন্দ্র কুমার মাহাতো, সুশীলা দেবী, সুরেন্দ্র কেওয়াতের পর তালিকায় যুক্ত হল নতুন নাম। রাজকিশোর নিশাদ। তাঁদের পেশা, পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় সবই আলাদা। এক কেবল, তাঁদের মৃত্যু। গত কয়েকদিনে ভোটমুখী বিহারে পরপর খুন হয়েছেন এই তাঁরা। কাউকে খুন করা হয়েছে মাথের মাঝে গুলি করে, কারো প্রাণ গিয়েছে লাওহার রডের ঘায়ে।


নেতাদের কথা বলতে গেলে, চারদিনে দু’ জন। বিহারে পরপর খুন নেতা। বৃহস্পতিবার খুন হয়েছেন বিহারের এনডিএ জোট সঙ্গী নীতীশ কুমারের জনতা দলের নেতা। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য দিবালোকে দু’ জন বাইক আরোহী লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করে রাজকিশোর নিশাদ নামের খাগারিয়ার ওই নেতাকে। 

আরও পড়ুন: এই ছোবল দিল বলে! শরীর জুড়ে লিকলিকে সাপ জড়িয়ে মেলার মাঝে হাঁটছেন মানুষ, কারন জানলে অবাক হবেন...

ঠিক তার দু’ দিন আগেই বিহারে খুন হন  বিজেপি নেতা। ১৩ জুলাই বিহারে খুন হন বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র কেওয়াত। স্থানীয় বিজেপির কিষাণ মোর্চার নেতা কাজ করছিলেন মাঠে। আচমকা কয়েকজন আততায়ী এসে একেবারে কাছ থেকে পরপর গুলি চালায় নেতাকে লক্ষ্য করে। তাদের প্রত্যেকের মুখ গামছায় ঢাকা ছিল। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জানায়, অন্তত চারটি গুলি চালানো হয়েছে। সুরেন্দ্রকে উদ্ধার করে তৎক্ষণাৎ পাটনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।  


এর আগে চার জুলাই, পাটানায় নিজের বাড়ির সামনেই খুন হন খেমকা। খেমকার মৃত্যুতে তোলপাড় হয় পাটনা। গান্ধী ময়দান থানার অন্তর্গত টুইন টাওয়ার এলাকার প্যানাশ হোটেলের সামনে ঘটে ব্যবসায়ী-নেতার খুনের ঘটনা। জানা গিয়েছে, সেদিন তিনি একটি বৈঠক সেরে ফিরছিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর উপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। পুলিশ অনুমান করেছে ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে সুপরিকল্পিত।  এমনকি একাধিক হামলাকারী এতে জড়িত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার আগে খেমকার গতিবিধি নজরে রাখতে 'স্পটার' ব্যবহার করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেউ তাঁকে অনুসরণ করছিল পুলিশের ধারণা৷ সুযোগ বুঝে অভিযুক্তদের তথ্য সরবরাহ করছিল।


যদিও ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। ফের শুক্রবার গভীর রাতে রামকৃষ্ণ নগর থানার অন্তর্গত জখরিয়াপুর এলাকায় ফের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, তিনি 'ত্রিশনা মার্ট' নামের একটি দোকানের মালিক ছিলেন। শুক্রবার রাত প্রায় ১১ টা নাগাদ তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়ে কিছু অজ্ঞাত দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে আচমকা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানায়, এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখছে তারা। ঘটনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ স্থানীয় ব্যক্তিদের।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সর্বশেষ স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (SCRB) তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ২২৯টি করে মোট ১,৩৭৬টি খুনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যেখানে ২০২৪ সালে মোট ২,৭৮৬টি এবং ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ২,৮৬৩।
জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র-সহ সহিংস অপরাধের ক্ষেত্রে বিহার ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এনসিআরবি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭, ২০১৮, ২০২০ এবং ২০২২ সালে সহিংস অপরাধের হারে রাজ্যটি দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
SCRB তথ্য আরও দেখায় যে অস্ত্র আইনের মামলার ক্ষেত্রে পাটনা শীর্ষ স্থানে রয়েছে। যেখানে গড়ে বার্ষিক ৩২১.৭টি মামলা হয়। তারপরে রয়েছে বেগুসরাই (১৬৭.৭), মুজাফফরপুর (১৫৮.৩), নালন্দা (১১৭.৯) এবং বৈশালী (১১৭.৮)।
অস্ত্র আইনের মামলা এবং সহিংস অপরাধের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে পাটনা আবারও তালিকার শীর্ষে রয়েছে। গড়ে বার্ষিক ৮২টি সহিংস ঘটনা ঘটে, তারপরে রয়েছে মোতিহারি (৪৯.৫৩), সরণ (৪৪.০৮), গয়া (৪৩.৫০), মুজাফফরপুর (৩৯.৯৩) এবং বৈশালী (৩৭.৯০)।