আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাতে পাসবই আর মনের ভেতর একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে শেষ বিদায় নিয়েছেন গুড়িয়া দেবী। বিহারের মুজফ্ফরপুরের বাসিন্দা, ৩৫ বছরের এই গৃহবধূর মৃত্যুর জন্য কাঠগড়ায় এক সংস্থা। পরিবারের অভিযোগ, ঋণের কিস্তি মেটাতে না পারায় ওই সংস্থার এজেন্টরা তাঁকে এতটাই হেনস্থা করেন যে, শেষ পর্যন্ত বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন তিনি।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গুড়িয়ার স্বামী পিন্টু গোস্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি। কাজের সূত্রে তিনি দূরে থাকতেন। পিন্টু জানান, তাঁর স্ত্রী চারটি সংস্থা থেকে মোট দেড় লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হতো। গত বুধবার গুড়িয়া ফোন করে মাত্র ২৫০০ টাকা চেয়েছিলেন স্বামীর কাছে। কিন্তু পিন্টু তখন টাকা জোগাড় করতে পারেননি। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সব শেষ হয়ে যায়। পিন্টুর দাবি, বাড়িতে ঝগড়াঝাঁটি ছিল না, কেবল ওই ধারের টাকার জন্যই ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল গুড়িয়াকে। আর এর জেরেই এমন চরম পদক্ষেপ করেন গুড়িয়া৷ 

বিহারে এই ছবি এখন চেনা। চলতি মাসেই এক ব্যক্তি তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন, যার নেপথ্যেও ছিল ঋণের চাপ। অভিযোগ উঠেছে, বহু সংস্থা কোনও নিয়ম না মেনেই ব্যবসা চালাচ্ছে। চড়া সুদে টাকা দিয়ে পরে শুরু হচ্ছে অকথ্য অত্যাচার। স্থানীয়রা এই সংস্থাগুলোকে ‘গুন্ডা ব্যাঙ্ক’ নামে সম্বোধন করছেন। 

পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে বিহারে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। ঋণের বহর ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দেশের যে ১০টি জেলায় এই ঋণের বোঝা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে ৫টিই বিহারের।

সমাজকর্মীদের দাবি, সাধারণ মানুষকে ব্যবসার টোপ দিয়ে ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকায় সংসার চলে না, উল্টে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। কিস্তি দিতে দেরি হলেই শুরু হয় বাড়িতে চড়াও হওয়া বা কটু কথা বলা। শুধু সাধারণ মানুষই নন, ঋণের কিস্তি আদায়ের চাপে খোদ সংস্থার কর্মীরাও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।

রাজ্য প্রশাসন অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে। বিহারের পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, এই ‘লোন শার্ক’ বা ঋণের কারবারিরা মাফিয়ার মতো কাজ করছে। এই সব অবৈধ কারবার বন্ধ করতে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।