আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোদি সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও ভাষণের পেছনে ভেসে উঠছে এক অস্বস্তিকর চিত্র—‘পরিষ্কার রাজনীতি’ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শ্লোগানকে ঢাল করে আসলে বিরোধীদের কোণঠাসা করার কৌশল। দ্য ওয়্যার-এ প্রকাশিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক সঞ্জয় কে. ঝার প্রতিবেদনে এই অভিযোগই উঠে এসেছে।
‘ভোট চুরি’ বিতর্ক আর হোম মিনিস্টারের বিল
সম্প্রতি ভোট কারচুপির অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন যখন উত্তপ্ত, তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সাংবিধানিক সংশোধনী বিল পেশ করেন। প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, কোনও সাংসদ বা বিধায়ক যদি গুরুতর অভিযোগে ৩০ দিনের বেশি জেলে থাকেন, তবে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদত্যাগ করতে হবে। ঝার মতে, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বদলে জনমত ঘোরানোর একটি ‘রাজনৈতিক খেলা’।
দ্বিচারিতা ও বাছাই করা টার্গেট
মোদির নির্বাচনী প্রচার বারবার দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত সংসদ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—বিজেপি-ঘনিষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তা প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, আর বিরোধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়। এর ফলে সরকারের নিরপেক্ষতার দাবি প্রশ্নের মুখে।
অপরাধী সাংসদদের বাড়বাড়ন্ত
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)-এর তথ্য অনুযায়ী, অপরাধমূলক অভিযোগে অভিযুক্ত সাংসদদের সংখ্যা লাগাতার বেড়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে ১৮৬ জন (৩৫%) সাংসদ অপরাধের অভিযোগে জর্জরিত ছিলেন, ২০১৯-এ সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ২৩৩, আর ২০২৪-এ পৌঁছেছে ২৫১-এ (৪৬%)। এর মধ্যে বিজেপি সাংসদদের সংখ্যা সর্বাধিক। এতে স্পষ্ট, ‘অপরাধমুক্ত সংসদ’-এর প্রতিশ্রুতি আসলে রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার ছাড়া কিছু নয়।
অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা: বিহারের চিত্র
ঝা বিহারের উদাহরণ টেনে দেখিয়েছেন কীভাবে উন্নয়নের নামে আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। বিজেপি শাসিত বিহার এখনও মাথাপিছু আয়ের নিরিখে দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য। রাজ্যের মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের অর্ধেকেরও কম, যেখানে তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য বহু গুণ এগিয়ে। অথচ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে—‘বিকশিত বিহার’।
আসল প্রশ্ন থেকে চোখ ঘোরানো
ঝার মতে, এ ধরনের ‘রাজনৈতিক নাটক’ দেশবাসীর মনোযোগ সরিয়ে দেয় আসল প্রশ্নগুলো থেকে—চীন সীমান্তে উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবর্তন, কিংবা অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সঙ্কট। সরকারের কৌশল যেন একটাই: বিতর্কিত প্রচারাভিযান ও আইনি পদক্ষেপের নামে নাগরিকদের বিভ্রান্ত রাখা।
