আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাম শাসিত কেরলে বাংলাদেশি সন্দেহে ছত্তিশগড়ের এক পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ ডিসেম্বর পালক্কাড জেলায়। ৩১ বছর বয়সী রামনারায়ণ বাঘেল কাজের সন্ধানে কেরলে গিয়েছিলেন। ১৭ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভালায়ার থানা এলাকার আত্তাপল্লম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা রামনারায়ণকে চুরির সন্দেহে ধরে ফেলে। এরপর তাঁর উপর চলে অকথ্য অত্যাচার। পরে মারা যান রামনারয়ণ। ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে যে, মাথায় গুরুতর আঘাত, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরেই ছত্তশগড়ের এই যুবকের প্রাণহানি হয়েছে।
পুলিশের জানিয়েছে, মৃত রামনারায় বাঘেলের কাছ থেকে কোনও চোরাই মাল উদ্ধার হয়নি।
নৃশংস এই ঘটনার একটি ভিডিও সামনে এসেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে রামনারায়ণের শরীরে ৮০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা মাথায় গুরুতর আঘাত, সারা শরীরে একাধিক ক্ষত এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার সময় রামনারায়ণের বুক থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গিয়েছে।
হামলার ৩১ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিও-টিতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় বাসিন্দারা রামনারায়ণকে বারবার 'বাংলাদেশি' বলে সম্বোধন করছে। এক পর্যায়ে ভিডিও ধারণকারী একজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, "তোমার ভাষা কী?" এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাঁর গ্রাম কোথায়। রামনারায়ণ ঠিকমতো উত্তর দেওয়ার আগেই তাঁর চারপাশের লোকেরা নিজেরাই বলে ওঠে, "তুমি বাংলাদেশি।"
মারধরের কারণে প্রায় অচেতন অবস্থায় রামনারায়ণকে বলতে শোনা যায় যে, তাঁর বোন গ্রামে থাকে। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি ব্যঙ্গ করে উত্তর দেন, "তোমার বোন বাংলাদেশি"। তা সত্ত্বেও, উন্মত্ত জনতা বলতে থাকে "তুমি বাংলাদেশি"। সেই সঙ্গেই রামনারায়ণের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করতে থাকে।
কেরল পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) প্রাসঙ্গিক ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে। আত্তাপল্লম গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ অভিযুক্ত মুরলি, প্রসাদ, অনু, বিপিন এবং আনন্দনকে ১৮ই ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ স্পষ্ট করেছে যে, রামনারায়ণের কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না। নিহত ব্যক্তি আট ও দশ বছর বয়সী দুই ছেলে আছে। রামনারায়ণের তুতো ভাই শশীকান্ত বাঘেল বলেছেন, "এই ক্ষতিতে পরিবারটি শোকে মুহ্যমান।"
শশীকান্ত বলেন, "রামনারায়ণই শুধু জীবিকা অর্জনের জন্যই কেরলে গিয়েছিল, কিন্তু তাঁকে বাংলাদেশি ভেবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি একজন গরিব মানুষ ছিলেন।" শশীকান্ত আরও বলেন, "আমি সরকারের কাছে তাঁর পরিবারকে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। তাঁর ছোট ছোট সন্তান রয়েছে, তাঁদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। সরকারের উচিত শোকগ্রস্ত পরিবারটিকে কিছু সহায়তা করা, যাতে তাঁরা বেঁচে থাকতে পারে এবং খাবার খেতে পারে।"
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ছত্তিশগড়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা বলেছেন, " যা ঘটেছে তা মর্মান্তিক। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ছত্তিশগড় সরকার সর্বতভাবে পরিবারটিকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে।"
