আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে এক যুবকের জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলেন এক মহিলা। কিন্তু বুধবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বরং অভিযোগকারিণীকেই তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারপতিরা। বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহের দ্বৈত বেঞ্চ জানায়, অভিযুক্ত যুবক বিবাহবিচ্ছেদের পর ওই মহিলার সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখেননি। সেইসঙ্গে, বিবাহিত অবস্থায় একাধিক বার অভিযুক্তের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য মহিলার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত।

আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলে, ‘‘আপনি বিবাহিতা ছিলেন। দুই সন্তানের মা। যথেষ্ট বয়স্ক এবং সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন। আপনার বোঝা উচিত ছিল, বিয়ের বাইরে এমন সম্পর্ক কতটা যুক্তিসঙ্গত।’’ মহিলার আইনজীবীর দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হওয়ার পর ২০১৬ সাল থেকে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাঁর মক্কেল। অভিযুক্ত নাকি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে একাধিক বার হোটেলে ডেকে নিয়ে গিয়েছেন। এই অভিযোগ তুলে পটনা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হলেও অভিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। পরে মহিলার তরফে সেই জামিন খারিজের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন: মিলনের আগে প্রস্রাব খাওয়ানোর রীতি! প্রস্রাবের স্বাদেই না কি লুকিয়ে কামনার বার্তা! কারা করে এটা?

তবে শীর্ষ আদালত জানায়, বিবাহবিচ্ছেদের পরে অভিযুক্ত আর মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি, ফলে ধর্ষণের অভিযোগ টেকসই নয়,পাশাপাশি, মহিলার সম্মতিতে বার বার হোটেলে গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি আদালত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। আদালতের বক্তব্য, যদি এই সম্পর্কের মধ্যে জোরজবরদস্তি বা প্রতারণার উপাদান না থাকে, তবে একে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে গণ্য করা যায় না। উল্টে বিবাহিত অবস্থায় এ ধরনের সম্পর্ক মহিলার নিজের বিরুদ্ধেই আইনি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এই রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, নারীর সম্মতি ও প্রতারণার সীমানা নিয়ে। কেউ আবার বলছেন, আদালতের ভাষা অত্যন্ত কঠোর ও অবমাননাকর।

এর পরই, বিহার পুলিশের কাছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে ওই যুবক শারীরিক সম্পর্ক গড়েছেন বলে জানান। পটনা হাইকোর্টে গোড়াতেই অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়ে যান অভিযুক্ত। বিবাহবিচ্ছেদের পর ওই মহিলার সঙ্গে আর অভিযুক্ত শারীরিক সম্পর্কে জড়াননি বলে জানায় আদালত। সেই জামিনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। 

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস’ নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০২৪ সালের এক রায়ে আদালত জানিয়েছিল, যদি পুরুষটি শুরু থেকেই জানতেন যে তিনি মহিলাকে বিয়ে করবেন না, তবে সেটি প্রতারণার আওতায় পড়ে এবং ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে যদি সম্পর্কটি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং সময়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়, তা হলে একে ‘ধর্ষণ’ বলা যাবে না।

গার্হস্থ্য হিংসা, সম্পর্কের প্রতারণা এবং সম্মতির সীমানা নিয়ে বিচারব্যবস্থার এই ব্যাখ্যা একদিকে যেমন আইনগত স্পষ্টতা দিচ্ছে, তেমনই সমাজের চোখে নারীর অবস্থান নিয়েও নতুন করে ভাবনার দরজা খুলছে।