আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে প্রেম নিবেদনের অভিনব উপায় আবিষ্কার করেছে প্রাণীবিজ্ঞানীরা—নারী জিরাফ তার সঙ্গীকে উপহার দেয় মূত্র! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এটি পুরুষ জিরাফের কাছে প্রেমপত্রের চেয়ে কম কিছু নয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী আচরণ বিশারদ লাইনেট ও বেঞ্জামিন হার্ট এক গবেষণায় জানিয়েছেন, নারী জিরাফের মূত্রের মাধ্যমে পুরুষ জিরাফ বুঝে নেয় সে মিলনের জন্য প্রস্তুত কিনা।
জিরাফের শরীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য এ ক্ষেত্রে এক বড় কারণ। অন্যান্য অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো গজেল পুরুষরা মাটিতে পড়ে থাকা মূত্র চেটে নারীর যৌন প্রস্তুতির বার্তা বুঝে নিতে পারে। কিন্তু লম্বা গলা আর ভারী মাথা নিয়ে মাটিতে নত হয়ে মূত্র পরীক্ষা করা জিরাফের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পুরুষ জিরাফরা এক অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছে—সরাসরি নারী জিরাফের মূত্রধারায় জিভ ঢুকিয়ে ‘স্বাদ’ নিয়ে নেয়।
নামিবিয়ার এটোসা ন্যাশনাল পার্কে ১৯৯৪, ২০০২ এবং ২০০৪ সালে গবেষকেরা এই আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায়, পুরুষ জিরাফ নারীকে হালকা ধাক্কা বা লাথি মেরে প্রস্রাব করতে বলে। রাজি থাকলে নারী কয়েক সেকেন্ড প্রস্রাব করে, আর সেই ধারা থেকে সরাসরি জিভে তুলে নেয় পুরুষ। এরপর সে ঠোঁট কুঁচকে মুখ দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে 'ফ্লেহম্যান রেসপন্স' প্রদর্শন করে। এর মাধ্যমে মুখের ছাদে থাকা দুটি খাঁজ দিয়ে গন্ধ চলে যায় ভোমেরোনাসাল অঙ্গ বা ভিএনও-তে, যা যৌন-সন্ধানী রাসায়নিক চিহ্ন শনাক্ত করে।
হার্ট দম্পতির মতে, জিরাফদের ক্ষেত্রে ভিএনও’র সঙ্গে নাকের সংযোগ তুলনামূলকভাবে দুর্বল, বরং মুখের সংযোগই বেশি কার্যকর। সংরক্ষিত জিরাফ নমুনা পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, জিরাফের এই মৌখিক সংযোগ বিশিষ্ট হওয়াটাই তাদের যৌন আচরণের বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করে। অনেক স্তন্যপায়ী নির্দিষ্ট ঋতুতে প্রজনন করে বলে গাছপালার মৌসুমি গন্ধ বুঝতে নাক-ভিএনও সংযোগ দরকার হয়। কিন্তু জিরাফ সারা বছর প্রজনন করতে পারে, তাই নাকের সংযোগ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আরও পড়ুন: এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় পাইলটদের ভূমিকা নিয়ে চাঞ্চল্যকর মার্কিন রিপোর্ট!
এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, প্রকৃতির জগতে প্রেম-ভাষা কত বিচিত্র হতে পারে। ভালোবাসা এখানে শুধুই আবেগ নয়, শরীরী সংকেতের গভীর বিজ্ঞানের ছোঁয়াও তার সঙ্গে মিশে আছে। জিরাফদের জন্য প্রেম মানে সরাসরি ‘মূত্রসিক্ত’ বার্তা—স্বাদ ও গন্ধে মিশে থাকা এক প্রাকৃতিক মিলনের আহ্বান।
এই অনন্য প্রেমালাপের মাধ্যমে জিরাফদের জৈব-যোগাযোগ ব্যবস্থার এক চমৎকার দিক সামনে আসে, যেখানে মৌলিক গন্ধ ও স্বাদের ভিত্তিতে যৌন প্রস্তুতির সংকেত আদান-প্রদান হয়। ফ্লেহম্যান প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পুরুষ জিরাফ নারীর মূত্রের রাসায়নিক সংকেত বিশ্লেষণ করে বুঝে নেয়, ডিম্বস্ফোটনের পর্যায়ে আছে কিনা। এই আচরণ কেবলমাত্র শারীরবৃত্তীয় নয়, বরং প্রকৃতির নিখুঁত অভিযোজনের নিদর্শন—যেখানে শারীরিক গঠন, যৌন আচরণ ও প্রজনন কৌশল একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
এটি একটি প্রাকৃতিক কৌশল, যা প্রাণীর জীবনে যৌন নির্বাচনের জটিলতাকে সহজ করে তোলে। জিরাফ সমাজে নারীর সম্মতি এবং পুরুষের ধৈর্য মিলিয়ে এক প্রকার নীরব প্রেমের সুর বয়ে আনে, যা বিজ্ঞান ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে সৃষ্টি এক অনন্য প্রেমকাব্য।
